সাজেক! নামটি শুনলেই প্রথমেই চোখে ভাসে মেঘের দৃশ্য। সাজেক ভ্যালী ভ্রমন নিয়ে সর্ম্পূন গাইডলাইন থাকবে আজকের এই পর্বে। প্রকৃতির অপার সৌন্দাযের্র নিদেশন আমাদের এ বাংলাদেশ। ৬ টি ঋতু, নদী, সাগর, পাহাড় আর সবুজ প্রকৃতি এগুলোই তো আমাদের প্রকৃতির প্রধান অলংকার। প্রকৃতির এ অপার সৌন্দারযের অনন্য একটি সাজেক।
সাজেক এর নাম মনে আসলেই মনে হয় মেঘের রাজ্যর কথা। চারদিকে মেঘের মেলা, উপরে নীল আকাশ আর ঘন সবুজ পাহাড়ের গায়ে মেঘের ছায়া। দুরে যত দুর চোখ যায় সবুজ পাহাড় আর দিগন্তে মিশে গেছে নীল আকাশ। এ যেন রুপ কথার সর্গরাজ্য। দিনের সাজেক এমন হলেও রাতের সাজেক এর সৌন্দর্যে অন্যরকম। সূর্যোয়স্ত যাওয়ার সাথে সাথে স্বচ্ছ আকাশে তারা গুলো জ্বল জ্বল করে ওঠে। রাত বাড়ার সাথে সাথে পুরো আকাশ ছেয়ে যায় হাজারও জ্বলন্ত তারায়। সেই সাথে যদি থাকে পূর্নিমা তাহলে তো কথাই নেই। পূর্নিমায় সাজেক সাজে আরেক ভিন্নরূপে । তখন মনে হবে পূর্নিমায় চাদের আলোয় তারার সিড়ী বেয়ে এই বুঝি নেমে এল সর্গ থেকে কোন অপ্সরা। ভাগ্য ভালো হলে দেখা যেতে পারে মিল্কিওয়ে বা ছায়াপথের। তবে ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে সাজেকের রুপ ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই একবারে গিয়ে সে স্বাদ পূর্ন হবে না কখনই। তবে সাজেকে প্রকৃতির আসল রূপ দেখার জন্য সেরা সময় হচ্ছে বর্ষাকালের শেষ দিকে এবং শীতকাল।
নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর এবং জনপ্রিয় স্থান এই সাজেক ভ্যালি (Sajek Valley)। এটি রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত, যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। এটি ত্রিপুরা-মিজোরাম সীমান্তবর্তী এলাকা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ১৮০০ ফুট। এর অবস্থান রাঙ্গামটি জেলায় হলেও খাগড়াছড়ি থেকে এখানে যাতায়াত অনেক সুবিধাজনক। কারণ, খাগড়াছড়ির দিঘীনালা থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৪০ কিলোমিটার। তাই ভ্রমণ পিপাসুরা দিঘীনালা থেকেই সাজেক যেতে বেশি পছন্দ করেন।
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি রুটে বিভিন্ন পরিবহনের বাস চলাচল করে। যেমন শ্যামলী, হানিফ, এস আলম, সৌদিয়া ও শান্তি পরিবহন । গাবতলী, কলাবাগানসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে পরিবহনগুলোর কাউন্টার। ঢাকা থেকে বাস ছেড়ে চট্টগ্রাম রোড হয়ে কুমিল্লা, ফেনী পার হয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাই হয়ে খাগড়াছড়ি শহরে পৌঁছায়। এতে সময় লাগে ৮ ঘণ্টার মতো।
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যেতে হবে খোলা জিপে, যা চান্দের গাড়ি নামেই পরিচিত। দুদিনের জন্য ভাড়া করলে আপনাকে গুনতে হবে ৮হাজার ৫০০ থেকে ১২ হাজার টাকা। চান্দের গাড়িতে আসন সংখ্যা ১২টি। দলীয় ভাবে গেলে সবচেয়ে ভাল হয় তাহলে খরচ কিছুটা কম হবে। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক উদ্দেশ্যে দুটি টাইমে গাড়ি ছাড়ে। কারন সেনাবাহিনি দুটি টাইমে গাড়ি সাজেকে ঢোকার অনুমতি দিয়ে থাকে । আর সেটা হল সকাল ১০ টা আর বিকেল ৩ টা । দীঘিনালা থেকে সেনাবাহিনীর এসকর্ট শুরু হয় সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে। তাই ঐ সময়ের আগেই আপনাকে পৌঁছে যেতে হবে খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালায়। নইলে একবার সকালের এসকর্ট মিস করলে আবার এসকোর্টে পেতে অপেক্ষা করতে হবে বিকেল অবধি।তাই এ বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। বিদেশী কোন যাত্রী থাকলে তাকে আলাদা ভাবে পারমিশন নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কাগজপত্র ঠিক থাকলে কোন ঝামেলা নেই।
দীঘিনালা থেকে প্রথমে যেতে হবে বাগাইহাট। সেখান থেকে মাচালং হাট হয়ে সরাসরি পৌঁছে যাবেন সাজেকে। খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেক যেতে মোট সময় লাগবে প্রায় আড়াই ঘণ্টার মতো। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তাধরে চলা এই ছোট জার্নিটি সাজেক ট্যুরের অন্যতম আকর্ষণ। চারদিকে শুধু পাহাড় আর হরিতের সমারোহ আপনাকে ভুলিয়ে দেবে পথের ক্লান্তি।
সাজেক বিলাস:
সাজেকে পৌছে একটু বিশ্রাম নিয়ে বের হবেন । আধাঘন্টার মত হাটলে সাজেককে খুব ভালো ভাবেই দেখা যায়। সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া কংলাক পাহাড়। চূড়ায় উঠতে উঠতে দেখতে পাবেন মিজোরাম সীমান্তের পাহাড় আর সবুজের মিতালি। কংলাকের চূড়ায় উঠে চারপাশে তাকালে সত্যি সত্যি ভুলে যাবেন, আপনি ছিলেন কোনো যান্ত্রিক নগরে দূষিত বাতাস, শব্দ এবং কর্কট সমাজে জন্ম নেওয়া মানুষ। আপনার মন, প্রাণ, দেহ পুলকিত হবে এক বিশুদ্ধ চিন্তা এবং অনুভূতিতে। সূর্যোদয় ও অস্ত দেখার সুখানুভূতি সারাজীবন মনে রাখবেন। এছাড়াও ভোরে সূর্যোদয় দেখতে চাইলে হ্যালিপ্যাডে চলে যাবেন অবশ্যই। সে জন্য উঠতে হবে খুব ভোরে আর চলে যেতে হবে এক বা দুই নম্বর হ্যালিপ্যাডে। সাজেকে সূর্যোদয়ের সময় সোনালি আভা সাদা মেঘের ওপর যখন ঠিকরে পড়ে; তখন অসাধারণ এক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন
• সঠিক সময়ে এসকোর্ট দেওয়া।
• সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের ছবি তোলা যাবে না।
• স্থানীয় লোকজনের ছবি তোলার আগে অবশ্যই অনুমতি নিয়ে নেবেন।
• ছুটির দিনে কটেজ পাওয়ার ঝামেলা এড়াতে বেশ কয়েক দিন আগে (এক মাস) বুকিং দিন।
• রবি, এয়ারটেল বা টেলিটক সিম সঙ্গে নিন।
• সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র রাখুন।
• সঙ্গে করে পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে যান।
• জিপের ছাদে বা মোটরসাইকেলে সতর্ক থাকুন।
• দুই-তিন দিনের জন্য সাজেক গেলে চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করার দরকার নেই।
• শুধু যাওয়ার জন্যই গাড়ি নিন। আসার সময় অন্য গাড়িতে আসুন।
• দীঘিনালা থেকে ফোন করেও গাড়ি নেওয়া যাবে।
আর যা দেখবেন: খাগড়াছড়ি জেলার দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- আলুটিলা গুহা, রিছাং ঝরনা, দেবতার পুকুর, হর্টিকালচার পার্ক, তৈদুছড়া ঝরনা, বিডিআর স্মৃতিসৌধ, মায়াবিনী লেক ও শান্তিপুর অরণ্য কুঠির। সাজেকের পাশাপাশি এসব জায়গাও ঘুরে দেখতে পারবেন।