রোমানিয়া ইউরোপের একটি দক্ষিণ-পূর্ব রাষ্ট্র। এর উত্তর-পূর্বে রয়েছে ইউক্রেন ও মলদোভা, পশ্চিমে হাঙ্গেরি এবং সার্বিয়া, দক্ষিণে বুলগেরিয়া ও দানিউব নদী। রোমানিয়ার পূর্বদিকে রয়েছে কৃষ্ণ সাগর। রোমানিয়ার মধ্যভাগে বয়ে গেছে কার্পেথিয়ান পর্বতমালার পূর্ব ও দক্ষিণাংশ । রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্ট। শিল্প, সাহিত্য এবং বাণিজ্যসহ যাবতীয় প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু রাজধানী বুখারেস্ট। রোমানিয়ার জাতীয় সংসদ যা রোমানিয়ার স্থানীয় ভাষায় পার্লামেন্টুল রোমানিয়ে নামে পরিচিত এটি রাজধানী বুখারেস্ট অবস্থিত। এ পার্লামেন্ট ভবনটি সারা পৃথিবীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম নির্মাণ। এর আগে কেবল মাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত পেন্টাগনের বিল্ডিং নির্মান করা হয়ে ছিল। অসাধারণ নির্মাণশৈলীর স্থাপত্যকলা, শহরের গঠন ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং এর সঙ্গে বিদ্যমান সাহিত্য এবং চিত্রকলার অপরূপ মেলবন্ধনের কারণে রাজধানী বুখারেস্টকে পূর্ব ইউরোপের প্যারিস নামেও ডাকা হয়।
আয়াতনে রোমানিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের নবম বৃহত্তম দেশ তবে জনসংখ্যার দিক থেকে সপ্তম । রোমানিয়া একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র এবং এর কোন রাষ্ট্রীয় ধর্ম নেই। তবে জনসংখ্যার সিংহভাগ খ্রিস্টান ।রোমানিয়ান ভাষা রোমানিয়ান যা কিনা ইতালিয়ান কিংবা ফ্রেঞ্চদের ভাষার সঙ্গে অনেকটা সাদৃশ্যপূর্ণ। রোমানিয়ার মুদ্রার নাম লিউ। লিউ শব্দের অর্থ হচ্ছে সিংহ।
রোমানিয়ার জাতীয় পতাকার নীল, হলুদ এবং লাল এ তিনটি ভিন্ন রঙের সংমিশ্রণ। এর মাধ্যমে ট্রান্সসিলভানিয়া, মলদাভিয়া এবং ওয়ালাসিয়ায় তিনটি ভিন্ন স্থানকে প্রতিনিধিত্ব করে। আর এই তিনটি স্থান রোমানিয়ার ঐতিহাসিক একতার পরিচয় বহন করে।
আঙুর, আপেল, সরষে এবং বিভিন্ন সবজি থেকে প্রস্তুতকৃত তেল থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন ধরণের ফার্মাসিটিকাল, ক্যামিকাল, লৌহ, ইস্পাত শিল্প, মেশিনারি শিল্প, বস্ত্রশিল্প এবং মোটর গাড়ি তৈরির কারখানার মতো ভারী ভারী শিল্প রোমানিয়ার অর্থনীতিকে করেছে সম্বৃদ্ধ । প্রকৃতি থেকে পাওয়া প্রচুর পরিমাণে খনিজ তেল সম্পদ এবং পৃথিবীতে জমা থাকা স্বর্ণের এক বিশাল ভাণ্ডার রোমানিয়াতে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রোমানিয়া পৃথিবীর ৪র্থ ওয়াইন প্রস্ততকারক দেশ। বিখ্যাত মোটরগাড়ি প্রস্তুত কোম্পানি “ডাসিয়া” এর সদর দফতর রোমানিয়ার মিওভেনিতে।
রোমানিয়া’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘রোমানাস’-থেকে, যার অর্থ ‘সিটিজেনস অব রোম’ বা রোমের অধিবাসী। ১৮৭৭ সালে রোমানিয়া অটোমান শাসকদের হাত থেকে মুক্ত হয় এবং ১৮৮১ সালে ‘কিংডম অব রোমানিয়া’-প্রতিষ্ঠিত হয়।
রোমানিয়া অনেকের কাছে ‘কান্ট্রি অব ড্রাকুলা’ কিংবা ভাম্পায়ারের দেশ নামেও পরিচিত। রোমানিয়া পৃথীবির একমাত্র দেশ যেখানে কালো জাদু বা ব্ল্যাক ম্যাজিককে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আর কালো জাদুর বা ব্ল্যাক ম্যাজিকের ওপর ট্যাক্স বসানও আছে সে দেশে।রোমানিয়ার সাধারণ মানুষের আতিথেয়তা, বন্ধু-সুলভ আচরন আর আন্তরিকতা যে কারও মন ভোলাতে বাধ্য। ইউরোপ মহাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক কাঠামোর বিবেচনায় অনেকে রোমানিয়াকে সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন। রোমানিয়াতে মেয়েদের চুল দেখে বলে দেওয়া যায় যে সে কী বিবাহিত না কি অবিবাহিত। অবিবাহিত মেয়েরা চুল খোলা রাখতে পছন্দ করে তবে মাঝে মাঝে চুলে বেণী গেঁথে থাকে। আর বিবাহিত নারীরা মারামা নামক এক ধরণের কাপড় দিয়ে চুল ঢেকে রাখে।
রোমানিয়া ইউরোপ মহাদেশের মধ্যে একটি প্রাচীন অঞ্চল, যেখানে হাজার হাজার বছর পূর্বে থেকেই মানুষের বসবাসের প্রমাণ রয়েছে। প্রায় ৩৭ হাজার ৮০০ থেকে ৪২ হাজার বছরের পুরোনো মানব ফসিল পাওয়া গেছে এই রোমানিয়াতে।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে সর্বপ্রথম কৃত্রিমভাবে ইনসুলিন প্রস্তুত করা নিকোলে কন্সটানটিন পাওলেস্কু ছিলেন একজন রোমানিয়ান চিকিৎসক। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম ফাউন্টেন পেন প্রস্তুত করেন পেট্রাচে পোয়েনারু, যিনি ছিলেন একজন রোমানিয়ান।
স্ট্যান লী এই নামটি কম বেশী অনেকেই জানি।। হাল্ক, স্পাইডারম্যান, এক্স-মেন, থোর, ক্যাপ্টেন আমেরিকা, আইরন ম্যান, অ্যান্টম্যান, ডেডপুল, ফ্যান্টাসটিক ফোর, ইলেক্ট্রা এ সকল জনপ্রিয় কমিক ক্যারেক্টার সিরিজ অর্থাৎ মারভেল কমিক সিরিজের স্রষ্টা স্ট্যান লীও ছিলেন একজন রোমানিয়ান বংশোদ্ভূত মার্কিন লেখক। এছাড়াও আইরিশ ঔপন্যাসিক ব্রাম স্টোকার রচিত বিখ্যাত চরিত্র ড্রাকুলা বা ভাম্পায়ারের চরিত্রটি চিত্রায়িত হয়েছে ওয়ালাসিয়ার বিখ্যাত অর্থোডোক্স রাজা ভ্লাদ দ্যা ইম্পাল্যারকে অনুসরণ করে, যিনি রোমানিয়ার সিঘিসোয়ারাতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীতে এ ড্রাকুলা সিরিজের ওপর অনেক সিনেমা নির্মিত হয়েছে।
সত্যিকার অর্থে রোমানিয় একটি ইতিহাস ঐতিয্যবাহী দেশ।