মালদ্বীপ…নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, স্বর্গের দ্বীপ, প্রকৃতির কন্যা, সৌন্দর্যের রানী, পৃথিবীর অন্যতম নয়নাভিরাম ও অপরূপ রূপের দেশ মালদ্বীপ। বিধাতা আপন মনের মাধুরী দিয়ে সাজিয়েছে এই মালদ্বীপকে তাই এর সৌন্দাযের্র কমতি নেই কোথাও । স্নিগ্ধ-শান্ত-মনোরম পরিবেশ, আদিম সমুদ্র সৈকত এবং ক্রান্তীয় প্রবাল প্র্রাচীর, নীল রঙের পানি আর সাদা বালুই পর্যটকদের মুল আকর্ষন। প্রতি বছর অর্ধকোটি পর্যটককে কাছে টানে মালদ্বীপের এই নয়নাভিরাম সৌন্দার্য উপভোগ করার জন্য।
সমুদ্রের সচ্ছ পানি আর জলরাশির দিগন্তজোড়া সমুদ্রবক্ষ যতদুর চোখ যায় যেন অপলক তাকিয়ে থাকতে মন চায়। সমুদ্রের গর্জন, আর বাধাহীন প্রবাল বায়ু অশান্ত মনকে শান্ত করে দেয়। সমুদ্রের ঢেউ জমেথাকা সকল কষ্ট ভাসিয়ে নিয়ে যায়। যারা সমুদ্র পছন্দ করেন, নির্জনতায় হারিয়ে যেতে চান, সমুদ্রের অবগাহনে নিজেকে স্নান করাতে চান তাদের জন্য মালদ্বীপই হচ্ছে আকর্ষণীয়, আদর্শ স্থান।
শ্রীলঙ্কা থেকে আনুমানিক ৪০০ মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে ১১৯২টি ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে ভারত মহাসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপ। যার মধ্যে ২০০টি বাসযোগ্য। মালদ্বীপের মোট আয়তন ২৯৮ বর্গ কিলোমিটার।মালদ্বীপের ইতিহাস ও ঐতিহ্য খুবই প্রাচীন। সংস্কৃত শব্দ দ্বীপমালা শব্দ থেকেই মালদ্বীপ। আবার কারও কারও মতে মালদ্বীপ হচ্ছে দ্বীপরাজ্য। কারও কারও ভাষায় এটি মহল দ্বীপ। মহল অর্থ প্রাসাদ। প্রাচীন শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক গ্রন্থ মালদ্বীপকে মহিলা দ্বীপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায় খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে রাজা অশোকের সময়ে কিছুসংখ্যক বৌদ্ধ ভিক্ষু মালদ্বীপে যায় এবং বসতি স্থাপন করেন। এরপর যায় দ্রাবির ও সিংহলি জনগোষ্ঠীরা ।দ্বাদশ শতক থেকেই মালদ্বীপে মুসলিম শাসন শুরু হয় । ১১৫৩ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৮০০ বছর ৯২ জন সুলতান নিরবিচ্ছিন্নভাবে দ্বীপটি শাসন করে । বিভিন্ন সময়ে পর্তুগীজ ও ব্রিটিশরা পর্যটক হিসেবে, কখনো কখনো বাণিজ্য কুঠি স্থাপন, কখনো ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের জন্য এখানে আসে। ১৯৬৫ সালের ২৬ জুলাই মালদ্বীপ ব্রিটিশদের কাছ থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে এবং ১৯৬৮ সালে সালতানাতে মালদ্বীপ থেকে রিপাবলিক মালদ্বীপে পরিণত হয়। ১১৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ইবনে বতুতা মালদ্বীপ ভ্রমণ করেছিলেন। মালদ্বীপের রাজধানীর নাম মালে। মুসলিম প্রধান দেশ হলেও অন্যান্য ধর্মাম্ভলীরাও এই মালদ্বীপে বসবাস করে।
মালদ্বীপের রাজধানী মালে নিয়ে কিছু কথাঃ
মালদ্বীপের রাজধানী মালে। মালে মালদ্বীপের সবচেয়ে বড় শহর এবং জনপ্রিয় স্থানগুলির একটি। বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসবে পরিচিত এই শহরটি আয়তন 5.8 বর্গ কিমি। সবচেয়ে জনবহুল এই দ্বীপটি বিশ্বেরও অন্যতম জনবহুল শহর । হুকুরু মস্ক, মালে মাছ বাজার, মালে জাতীয় যাদুঘর, সুনামি স্মৃতিস্তম্ভ এবং মুলি আজ প্যালেস মালের জনপ্রিয় কিছু স্থান। প্রবাল পাথর দিয়ে নির্মিত ‘ওল্ড ফ্রাইডে মসজিদ’ বলে খ্যাতহুকুরু মস্ক সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থাপত্য ভবন। খুব ছোট এই দ্বীপটিকে বলা হয় কিংস আইল্যান্ড। ঘণ্টাখানেক সময়ের মধ্যে পুরো মালে ঘুরে আসা সম্ভব।
পূর্ব মালদ্বীপে অবস্থিত এই দ্বীপটিতে ।সম্পূর্ণ সবুজে ঘেরা এই রাজ্যে পর্যটকরা আকাশ, সমুদ্র আর সবুজকে সঙ্গে করে চাইলে হারিয়ে যেতে পারেন অন্য এক জগতে।বিশ্বমানের ডাইভিং এরপাশাপাশি সমুদ্র তলদেশের অ্যাকুয়ারিয়াম আর একটি আকর্ষণ। এখানকার সৈকতে এসে সূর্যাস্ত না দেখলেই নয়। এত কিছুর সাথে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে আছে ন্যাশনাল মিউজিয়াম,জুমহরি ময়দানের মতো আরো অনেক দর্শনীয় স্থান।
রাজধানী মালের তীরঘেষেই হুলহুমালে আইসল্যান্ড। পাশেই ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্থান যা এই স্বর্গীয় দ্বীপগুলির প্রধান যাতায়তস্থল। অপরূপ সৌন্দর্যের এই দ্বীপ মালদ্বীপের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।
মালদ্বীপের দক্ষিণ এটল-এ অবস্থিত বৃহত্তম স্থানীয় দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম দ্বীপ মাফুসি আইল্যান্ডঃ। সমস্ত উদ্বেগ ভুলে চমৎকার কিছু সময়কাটাতে নির্জন এই দ্বীপটির কোন তুলনা নেই ।মালে থেকে সাতাশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপটিতে পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে ডুব সাইট এ গড়ে তোলা হয়েছে সামুদ্রিক বিনোদনের ব্যবস্থা। যেমন উইন্ড সার্ফিং, স্কুবা ডাইভিং, কায়াকিং ও প্যাডেল নৌকাসহ আরও অনেক রোমাঞ্ছকর সুযোগ। এ ছাড়াও রয়েছে তিমি, হাঙ্গরসহ রয়েছে বিরল প্রজাতীর সব মাছ।
মালদ্বীপের দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে একটি ‘এইচপি রিফ’। নর্থমালে অ্যাটলে অবস্থিত এইচপি রিফ এর সমুদ্রতলে অবস্থিত বড় বড় প্রবালের পাহাড় দেখতে উৎসুক পর্যটকদের ভিড় সারা বছরই লেগেই থাকে।
দক্ষিণ মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১.৮ কিলোমিটারদূরে অবস্থিত বিয়াধু আইল্যান্ডকে মালদ্বীপের সর্বোত্তম প্রাকৃতিক দৃশ্যের দ্বীপ বলে অ্যাখ্যায়িত করা যায়। সর্বাপেক্ষা নিরিবিলি রিসোর্টের এই দ্বীপের গভীর জলে ডুব দেয়ার সুযোগ রয়েছে ।ছোট এই দ্বীপটিতে ডুব সাইট এর সংখ্যা প্রায় পঁয়ত্রিশটিরও বেশি।
বাইশ একর এলাকা জুড়ে অবস্থিত ভেলিগান্ডু আইল্যান্ড মালদ্বীপের সেরা সৈকতগুলির মধ্যে একটি। উত্তর অ্যারি এটলে অবস্থিত এই দ্বীপ ছোট হওয়া সত্ত্বেও, সবুজে ঘেরা এই দ্বীপটি প্রশান্তিতে ভরিয়ে তোলে ।ভেলিগান্ডু আইল্যান্ড বিচ এর সাদা বালি এবং নীল জলের সন্ধি দেখার জন্য দম্পতিদের এই দ্বীপটি খুবই প্রিয়।উইন্ডসার্ফিং, কাতামারান স্যালিং,রিসোর্ট স্কুবা ডাইভিং, প্যারাসেইলিং, জেট স্কিইংএবং ক্যানোইং এই দ্বীপের মুল আকর্ষন।
উথিমূ আইল্যান্ড মালদ্বীপের উত্তরে দিকে অবস্থিত দ্বীপগুলির মধ্যে একটি। এই দ্বীপেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন সুলতান মোহাম্মদ ঠাকুরফানু ।প্রিয়স্বদেশকে পর্তুগিজদের হাত থেকে রক্ষা করতে সুলতান মোহাম্মদ ঠাকুরফানু পনেরো বছর যুদ্ধ করেছিলেন।সুলতান মোহাম্মদ ঠাকুরফানু বড় হয়েছিলেন উথিমূ আইল্যান্ডের উতিমু গান্ডুভারু নামের একটি কাঠের প্রাসাদে।তার এই বীরত্বের নিদর্শন ম্পর্কে জানতে হলে ঐতিহাসিক জায়গাটিতে ভ্রমণ অপরিহার্য।
ডাইভিং সাইট হিসেবে বেশ খ্যাতি রয়েছে মান্টা এরিয়ার। মালদ্বীপে আগত পর্যটকদের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এই জায়গা । ডুবরির বেশে যারা সমুদ্রতলে গিয়ে এর রূপলাবণ্য দেখতে চান, তাদের জন্য মাল্টা এরিয়া প্রসিদ্ধ জায়গা।
মালদ্বীপ সর্ম্পকে মজার কিছু ফ্যাক্ট ঃ
মালদ্বীপের সূর্য থেকে সাবধান । নিরক্ষীয় অঞ্চলের নিকটে অবস্থান হওয়ায় এখানে সুর্য ৯০ ডিগ্রী এঙ্গেলে কিরন দেয়। তাই এখানে তাপমাত্রা যথেস্ট উষ্ণ।
২: মালদ্বীপের বেশ কিছু দ্বীপ প্রায়শেই আকার আকৃতি পরিবর্তন করে। প্রকৃতিক কারনে বেশ কিছু দ্বীপের বালি সরে দ্বীপটি ছোট হয়ে যায়, আবার অনেক দ্বীপে বালি জমে বড় হয়ে যায়।
৩: বিশ্বের সবচেয়ে বড় তিনটি সামুদ্রিক মাছের অভয়ারন্য এই মালদ্বীপে অবস্থত। মালদ্বীপ পৃথিবীর এমন একটি স্থান যেখানে তিমি আর হাঙর প্রতিনিয়ত মুখামুখি হয়।
৪: মালদ্বীপ প্রায় ৬০ মিলিয়ন বছরের পুরোনো ডুবে যাওয়া আগ্নিওগিরির কথা মনে করিয়ে দেয়। সম্প্রতি এক গবেষনায় দেখা গেছে এখানে ডুবে থাকা প্রবাল প্রচীরের আ্যটেলগুলো কয়েক হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠেছে।
৫: মালদ্বীপ পৃথিবীর সর্বনিন্ম দেশ কারন এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১,৫ মিটার উপরে অবস্থিত।
৬: অনেক আগে মালদ্বীপের লেকজন প্রবাল দিয়ে ঘরবাড়ি নির্মান করত। কারন মালদ্বীপে প্রবাল সহজলব্য একটি জিনিস। তবে এখন প্রবাল বিশ্বঐতিয্যের অংশ হওয়ায এটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
৭:নারিকেল গাছ মালদ্বীপের জাতীয় গাছ। এটি জাতীয় প্রতীক হিসেবেও অনেকসময় ব্যবহৃত হয়।
প্রিয় দশর্ক আজ তাহলে এ পর্যন্তই, আগামীতে অন্য কোন ভিডিওতে আপনাদের সাথে কথা হবে। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ