মরোক্কো ভ্রমন করবেন? জেনে নিন এই দেশ সর্ম্পকে। (Morocco), আফ্রিকার উত্তর পশ্চিম পার্বত্য দেশ যা স্পেন থেকে সরাসরি জিব্রাল্টার প্রণালী জুড়ে আটলান্টিক মহাসাগরের এর তীরবর্তী পর্য ন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। মরোক্কোর পূর্বে আলজেরিয়া, উত্তরে ভূমধ্যসাগর ও স্পেন, এবং পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর । মরোক্কোর (Morocco) দক্ষিণ দিকের সীমানাটি বিতর্কিত । দক্ষিণ দিকের সীমানাটি বিতর্কিত তবে মরোক্কো পশ্চিম সাহারা এলাকার মালিকানা দাবী করে, এবং ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে পশ্চিম সাহারার অধিকাংশ এলাকা দখলে রেখেছে। মরোক্কো (Morocco)আফ্রিকার একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। এর রাজধানীর নাম রাবাত। বাহারী রঙের দেশ মরোক্কো একটি ইসলামিক দেশ।
মরোক্কো (Morocco) আরবি শব্দ যার নামের অর্থ “পশ্চিমের রাজ্য”। অন্যান্য ভাষায় প্রচলিত মরোক্কো নামটি এসেছে দেশটির পূর্বের রাজধানী মারাক্কেশ হতে, বার্বার ভাষায় যার অর্থ স্রষ্টার দেশ। অতি প্রচীন এই মরোক্কতে মানব বসতি গড়ে ওঠে প্রায় ৪,০০,০০০ বছর পূর্বে। খ্রিষ্টপূর্ব ৮ম ও ৬ষ্ঠ অব্দের মধ্যে মরক্কো উপকূলে ফোয়েনিয়ানরা উপনিবেশ স্থাপনের মধ্য দিয়ে মরক্কোর ইতিহাস নথিভুক্ত করা শুরু হয়েছিল। যদিও স্থানীয় বার্বাররা ( Indigenous Barbers) এরও দুই হাজার বছর পূর্বে অঞ্চলটিতে বসতি স্থাপন করেছিল।খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম অব্দে, উপকূলীয় অঞ্চলসমূহের উপর দ্যা সিটি স্টেট অব কারথেজ তাদের কর্তৃত্ব বিস্তার করে।তারা সেখানে অবস্থান করেছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় অব্দের শেষ পর্যন্ত, যখন স্থানীয় সম্রাটরা হিন্টারলেন্ট শাসন করেছিল।খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতাব্দী থেকে শুরু করে ৪০ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত স্থানীয় বার্বার সম্রাটরা রাজ্যটি শাসন করেছিল যখন এটি রোমান সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল।৫ম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য দ্বারা ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে পুনঃস্থাপিত হওয়ার পূর্বে এটা ভান্ডালদের দ্বারা পদদলিত হয়েছিল।
৮ম শতাব্দীর শুরুর দিকে অঞ্চলটি মুসলমানরা জয় করেছিল, কিন্তু ৭৮০ সালে বার্বার বিদ্রোহের পরে উমাইয়া খেলাফত থেকে তাদের সরে যেতে হয়েছিল।অর্ধ শতাব্দী পর মরক্কো রাষ্ট্রটি ইদ্রিসীয় রাজবংশ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।আলমোরাভিদ ও আলমোহাদ রাজবংশদ্বয়ের আওতাধীনে মরক্কো মাগরেব ও মুসলিম স্পেনে প্রভাব বিস্তার করেছিল।সাদী রাজবংশ ১৫৪৯ সাল থেকে ১৬৫৯ সাল পর্যন্ত দেশটি শাসন করেছিল।১৬৬৭ সাল থেকে সামনের বছরগুলোতে আলাউইত মরক্কোর শাসক রাজবংশের অধিপতি ছিলেন।
১৯১২ সালে প্রথম মরক্কীয় সংকট ও আগাদীর সংকটের পর ফেজ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। যার ফলে মরক্কো বিভক্ত হয়ে ফ্রান্স ও স্পেনের আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়েছিল।৪৪ বছর ফ্রান্সীয় শাসনের পর ১৯৫৬ সালে মরক্কো ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল এবং পরবর্তীকালে অতি অল্প সময়ে অধিকাংশ স্পেন নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল।আজ এটি উত্তর আফ্রিকার একমাত্র রাজতন্ত্র।
মরোক্কোর (Morocco) সেলিতে ১৯৭১ সালে ৪,০০,০০০ বছর পুরনো মানব ফসিল আবিষ্কৃত হয়। । ২০১৭ সালে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এগুলোর আয়ু নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং এগুলো কমপক্ষে ৩,০০,০০০ বছর পুরনো বলে প্রমাণিত হয়েছিল যা কিনা আবিষ্কৃত সবচেয়ে পুরনো হোমো স্যাপিয়েন্সের যা পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় নি।২০০৭ সালে ট্যাফরল্টে ছোট ছিদ্রবহুল ঝিনুকের মালা আবিষ্কৃত হয়েছিল যা ৮২,০০০ বছর পুরনো এবং এগুলো পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া ব্যক্তিগত সাজসজ্জার প্রাচীনতম নজির হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
মরোক্কোর (Morocco) অতি প্রচীন শহর হলেও দেশটি দ্রুত আধুনিকীকরণ হয়ে ওঠেছে এবং জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন করছে, তবে এটি তার প্রাচীন স্থাপত্য এবং ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি এখোনো ধরে রেখেছে। মরক্কোর বৃহত্তম শহর এবং প্রধান আটলান্টিক মহাসাগর বন্দর হল কাসাব্লাঙ্কা, এটি একটি শিল্প ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র। রাজধানী, রাবাত, আটলান্টিক উপকূলে উত্তরে দিকে অবস্থিত। অন্যান্য বন্দর শহরগুলির মধ্যে রয়েছে টাঙ্গিয়ার, জিব্রাল্টার প্রণালীতে, আটলান্টিকের আগাদির, এবং ভূমধ্যসাগরের আল-হোসেইমা। ফেস শহরে উত্তর আফ্রিকার সবথেকে ভালো সোক বা উন্মুক্ত বাজার রয়েছে বলে জানা যায়। মনোরম এবং প্রচীন মরোক্কো পৃথিবীর বুকে একাট দর্শনীয় স্থান। মধ্যযুগীয় ভ্রমণকারী ইবনে বতুতুহ,লিখেছেন যে “এটি একটি সেরা দেশ কারণ এদেশে প্রচুর ফল রয়েছে এবং রয়েছে প্রবাহিত জল ও পুষ্টিকর খাবার যা কখনই শেষ হয় না।”
পশ্চিম সাহারার উত্তরে বেশিরভাগ অঞ্চলজুরেই মরক্কো তাই ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর প্রভাবটাই বেশি। শীত এবং গ্রীষ্ম উভয় আবহাওয়াই বিরাজমান। অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বর্ষাকাল । মুষলধারে বৃষ্টির কারণে মাঝে মাঝে প্রবল বন্যা হয় ।
মরক্কো একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং সভ্যতার দেশ।স্বাধীনতার পর থেকে, চিত্রকলা ও ভাস্কর্য, সঙ্গীত, থিয়েটার, এবং চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তাদের সংস্কৃতের প্রকাশ করে। মরোক্কান ন্যাশনাল থিয়েটার 1956 সালে প্রতিষ্ঠিত মরোক্কান এবং ফরাসি নাটকীয় কাজের নিয়মিত প্রযোজনা করে থাকে। গ্রীষ্মে মাসগুলিতে সারা দেশে শিল্প ও সঙ্গীত উৎসব হয়, তার মধ্যে ফেসে পালন করা হয় বিশ্ব পবিত্র সঙ্গীত উৎসব। মরোক্কোর (Morocco) প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এইভাবে তাদের রয়েছে নিজেস্ব সংস্কৃতি এবং ঐতিয্য। সাংস্কৃতিকভাবে বলতে গেলে, মরোক্কো সবসময়ই বার্বার , ইহুদি এবং আরবি সাংস্কৃতিক ধারন করেছে সেই সাথে ফরাসি এবং স্প্যানিশ ঐতিয্য গ্রহন করেছে। মরোক্কোর (Morocco) জনপ্রিয় একটি সংগীত হল “চাবি” এটি এমন একটি সঙ্গীত যা অসংখ্য বৈচিত্র্যের সমন্বয়ে গঠিত যা মরক্কোর লোকসঙ্গীতের বহুবিধ রূপ থেকে এসেছে। চাবি মূলত বাজারে সঞ্চালিত হয়েছিল, কিন্তু এখন যে কোনো উদযাপন বা সভায় এটি পরিবেশন করা হয়।জনপ্রিয় পাশ্চাত্য সংস্কৃতিগুলোও মরক্কোতে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, যেমন ফিউশন, রক, কান্ট্রি, মেটাল এবং বিশেষ করে হিপ হপ।
মরক্কোর রন্ধনপ্রণালী বিশ্বের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় রান্না হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি বহির্বিশ্বের সাথে মরক্কোর দীর্ঘসম্পর্কের ফলাফল। মূলত মুরিশ, ইউরোপীয় এবং ভূমধ্যসাগরীয় খাবারের সংমিশ্রণ নিয়েই গঠিত মরক্কোর রন্ধনশিল্প।
মরোক্কোর (Morocco) রন্ধনপ্রণালীতে মশলা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যদিও হাজার হাজার বছর ধরে মরোক্কোতে মশলা আমদানি করা হয়েছে যেমন তিলিউইন থেকে জাফরান, মেকনেসের পুদিনা এবং জলপাই সেই সাথে ফেজ থেকে কমলা এবং লেবু ইত্যাদি। মরক্কোতে মুরগির মাংস সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয়। মরক্কোতে সবচেয়ে বেশি খাওয়া লাল মাংস হল গরুর মাংস এবং মোষের মাংশ। তবে মোষের মাংশ তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। মরক্কোর সবচেয়ে প্রাচীন একটি খাবার হল কুসকুস এটি মরোক্কোর (Morocco) জাতীয় খাবার।
মরোক্কোর (Morocco) জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। মরক্কো ১৯৮৬ সালে প্রথম আরব এবং আফ্রিকান দেশ হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপের (FIFA World Cup) অংশ নেয় এমনকি দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। মরক্কো ২০১৫ আফ্রিকা কাপ অফ নেশনস (Africa Cup of Nations)হোস্ট করার জন্য নির্ধারিত ছিল,কিন্তু মহাদেশে ইবোলা প্রাদুর্ভাবের কারণে নির্ধারিত তারিখে টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে অস্বীকার করে। মরক্কো ফিফা বিশ্বকাপ (FIFA World Cup) আয়োজনের জন্য পাঁচবার চেষ্টা করেছিল কিন্তু পাঁচবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং কানাডা-মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ বিডের কাছে হেরেছে। এছাড়াও মরোক্কোর (Morocco) ঝুলিতে আছে অলিম্পিক গেমসে (Olympic Games) এর অনেক গুলো পদক। বিশেষ করে দৌড়ে বেশ কয়েকটি বিশ্ব রেকর্ড করেন মরোক্ক। ফুটবল খেলার পাশাপাশি পোলো, সাঁতার এবং টেনিস ,গলফ ইত্যাদি খেলায় বেশ পারদর্শী। মরোক্কোর (Morocco) ঐতিহ্যবাহী একটি খেলার নাম হল ঘোড়দৌড়। এছাড়াও মরোক্কোর আরও একটি জনপ্রিয় খেলা হল কিকবক্সিং।
মরক্কোতে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে, ইউনেস্কো মরক্কোকে কিউবা, পাকিস্তান, ভারত এবং তুরস্কের মতো “ইউনেস্কো ২০০৬ সাক্ষরতা পুরস্কার” প্রদান করে।