ভানুয়াতু। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের শান্ত পানিতে গড়ে ওঠা ছোট্ট দ্বীপরাস্ট্র ভানুয়াতু। মেলেনেশিয়ানরা দেশটির মূল অধিবাসী। ধারণা করা হয়, এরা ৩৫ হাজার বছর আগে নিউগিনিসহ আশপাশের দ্বীপাঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। তাদের মূল আবাস পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। ক্রমে ক্রমে এরা ওশেনিয়া অঞ্চলের অনেক দ্বীপে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মেলেনিয়ানদের ভাষা ও সংস্কৃতিতে ঘটে রূপান্তর। এখানে ইউরোপীয়দের প্রথম আগমন ঘটে ১৬০৬ সালে।
ভানুয়াতু তে ছোট বড় ৮৩টি দ্বীপের মধ্যে ৬৫টিতে জনবসতি রয়েছে। বৃহৎ দুটি দ্বীপ মেথিও ও হান্টারসহ ১৪টি দ্বীপ আয়তনে ১০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি। অধিকাংশ দ্বীপই পর্বতময়। রয়েছে অসংখ্য আগ্নেয়গিরি। জনবসতি ও নিকটবর্তী সমুদ্রে রয়েছে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। কিছু দিন আগেও মাউন্ট মানরো নামক আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত থেকে বাঁচাতে মানুষজনকে সরিয়ে নেয়া হয় একটি দ্বীপ থেকে। ভানুয়াতু অত্যন্ত বৃষ্টিপ্রবণ দেশ। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২ হাজার মিলিমিটারের ওপরে। উত্তরের দ্বীপগুলোতে কখনো এর দ্বিগুণ বৃষ্টিপাত হয়। এটি অস্ট্রেলীয় ইকোজোনের অন্তর্ভুক্ত। নিউকেলিডোনিয়া, সোলমন দ্বীপপুঞ্জ এ সমভাবাপন্ন জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। সমুদ্রের পানির স্পর্শ এ অঞ্চলের আবহাওয়াকে কখনো চরমভাবাপন্ন হতে দেয় না।
প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত ভানুয়াতুর পূর্বে অস্ট্রেলিয়া। উত্তর-পূর্বে নিউ ক্যালিডেনিয়া, পশ্চিমে ফিজি এবং উত্তরে সোলেমান দ্বীপপুঞ্জ। মাত্র ২ লাখের মতো জনসংখ্যা অধ্যুষিত ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশটির অধিবাসীরা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী আমেরিকা ও ব্রিটিশদের পেছনে ফেলে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষের খেতাব পেয়েছে। এটি হেপিয়েস্ট প্লেস ইন দ্য আর্থ। নিউ ইকোনমিকস ফাউন্ডেশন (এনইফ) পরিচালিত ‘হ্যাপি প্লানেট ইনডেক্সে’ অনুযায়ী এটি বিশ্বের সবচেয়ে সুখী রাষ্ট্র। তৃতীয় বিশ্বের দেশটির মানুষের মনে বেশি শান্তি। দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। প্রাকৃতিক সম্পদ নেই বললেই চলে। এর পরও কেন দেশটির মানুষ সুখী এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের কৌতূহলের শেষ নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, মাটির সাথে রয়েছে এখানকার অধিবাসীদের নিবিড় সম্পর্ক। মাটি তাদের অনুপ্রেরণা যোগায়।
অবাক হলে এটি সত্যি যে এই দেশের মানুষের অর্থ উপার্জন জীবনের মূল লক্ষ নয়। যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে ফেরত স্থানীয় এক যুবকের চিন্তা থেকে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যায়। মাছ ধরা হবে তার পেশা। ইচ্ছা করলে সে ধনী হতে পারত। আধুনিক জীবনযাপন করতে পারত। কিন্তু পূর্বপুরুষের পেশা জেলে জীবন তার কাছে খুব আনন্দদায়ক। দেশটির অধিবাসীরা গরিব কিন্তু কেউ কোনো দিন না খেয়ে থেকেছে তার কোনো নজির নেই। বিনিময়ের মাধ্যম মুদ্রা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। অল্পতে ফসল ফলে এ মাটিতে। শুধু আবাদি জমির ওপর জীবিকা নির্বাহ করে বেঁচে আছে অসংখ্য মানুষ। বিষয়টি তাদের আত্মিক প্রশান্তি যোগায়। তাই ভূমির দখল নিয়ে বিদেশীদের সাথে তাদের যত বিবাদ আর বিরোধ। দেশটির আবহাওয়া বেশ ভালো। চমৎকার দীর্ঘ সমুদ্র উপকূল। বেকারত্ব আর প্রচলিত অর্থের দারিদ্র্য বিরাজ করলেও কর আরোপ ও সরকারি কঠিন নিয়ন্ত্রণের কোনো বালাই নেই। এর জন্য মানসিক দিক থেকে তারা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।
বিশ শতকের প্রথম দিকে ইউরোপ থেকে আসা সংক্রামক মহামারীতে ভানুয়াতুর জনসংখ্যা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৪৫ হাজারে। ঔপনিবেশিক শক্তি ব্রিটেন ও ফ্রান্স এ দ্বীপ দেশটিকে ভাগ করে নেয়ার আগে ১৮৮৭ সালে যৌথ নৌকমিশন গঠন করে। ১৯০৬ সালে তারা এটিকে যৌথ শাসনের অধীনে নেয়। ভাগাভাগির হিসাব অদ্ভুত। দেশটিতে বসবাসরত ইউরোপীয়রা নিজেদের শাসনের অধীনে থাকবে তবে ভানুয়াতুরা শাসিত হওয়ার ক্ষেত্রে দুই দেশের যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হবে। দ্বীপরাষ্ট্রটির অধিবাসী নি-ভানুয়াতুরা স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার হয়। অবশেষে আশির দশকে ফাদার ওয়াল্টার লিনিরির নেতৃত্বে দেশটি স্বাধীনতা পায়। তিনি দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
ধর্মবিশ্বাস আর সংস্কৃতি এখানকার মানুষদের দিয়েছে আলাদা পরিচয়। বিচিত্র জীবনাচরণ আর সংস্কৃতির অধিকারী এরা।
কম জনসংখ্যার দেশ ভানুয়াতুর ভাষাবৈচিত্র্য অদ্ভুত। ৮৩টি দ্বীপ নিয়ে ১২ হাজর বর্গকিলোমিটারের এ দেশে রয়েছে ১১০টি ভাষার প্রচলন। এগুলোর মূল ভিত্তি অস্ট্রেলেশিয়ান ভাষা। স্থানের ভিন্নতায় একই ভাষার মূল রূপের বিচ্যুতি ঘটে হাজার বছরের বিবর্তনে জন্ম নিয়েছে স¤পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন ভাষার। রীতিমতো প্রত্যেকটি ভাষায় মানুষ কথা বলে। বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। গড়ে প্রতি ২ হাজার মানুষের জন্য একটি ভাষা। ভাষার ঘনত্ব বিচারে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভাষার দেশ। তবে ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চের সাথে স্থানীয় ভাষাগুলোর মিশ্রণে নতুন একটি ভাষার সৃষ্টি হয়েছে। যেটিতে বেশি মানুষ কথা বলে। দেশটির সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য অনন্য। এটি প্রধানত তিনটি সাংস্কৃতিক অঞ্চলে বিভক্ত। উত্তরাঞ্চলে একজনের সম্মান নির্ধারিত হয় কতটা পরিমাণ সে দান করে তার ওপর ভিত্তি করে।
শূকুর এখানকার সবচেয়ে দামি পশু। প্রভাবশালীরা বেশি শূকুর দান করে। মধ্যভাগে প্রচলিত রয়েছে মেলানেশিয়ার সংস্কৃতি। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষেরা বিভিন্ন শ্রেণী-গোত্রে বিভক্ত। শৈশব থেকে বয়সের ধাপগুলোকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এখানে বরণ করা হয়। দ্বীপবাসীর জীবনে সঙ্গীত ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। কাঠের খোদাই করা বাদ্যযন্ত্র ঘরে ঘরে পাওয়া যায়। উপজাতীয় বিশ্বাসগুলো শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। তবে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের মধ্যে খ্রিষ্টানদের প্রাধান্য বেশি। ইহুদিও রয়েছে কিছু। সেখানে দুই শতাধিক মুসলমানও বাস করে।
ভানুয়াতু প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের পদ আলঙ্করিক। তাকে ইলেকটরাল কলেজের দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হতে হয়। সংসদ সদস্য ও আঞ্চলিক প্রতিনিধিদের নিয়ে ইলেকটরাল কলেজ গঠিত। সরকারপ্রধান হন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সংসদ সদস্যদের তিন-চতুর্থাংশের সমর্থনে নির্বাচিত হন। তার নির্বাচিত মন্ত্রিসভার আকার সংসদ সদস্যের এক-চতুর্থাংশের কম। এককেন্দ্রিক পার্লামেন্টের ৫২টি আসনের জন্য প্রতি চার বছর পরপর সাধারণ নির্বাচন হয়। প্রধান বিচারপতি এবং আরো তিন বিচারপতির সমন্বয়ে সুপ্রিমকোর্ট গঠিত। ব্রিটিশ সিস্টেমে গঠিত বিচারব্যবস্থায় প্রেসিডেন্ট প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন। অন্য তিনজন বিচারকও প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী নেতার পরামর্শ অনুযায়ী নিয়োগ দেন তিনি।
ছোট এই দ্বীপদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে মূলত কৃষি, মৎস্য আর পর্যটনের ওপর। বছরে ৬০ হাজারের বেশি পর্যটক দেশটিতে ভ্রমণ করে। কয়েকটি ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে। নব্বইয়ের দশক থেকে জাতীয় উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি গড়ে ৩ শতাংশ। পর্যটনকে কেন্দ্র করে অর্থনীতি চাঙ্গা করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
ভানুয়াতুতে কোনো নিয়মিত সেনাবাহিনী নেই। নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে ভানুয়াতু পুলিশ ফোর্স। তাদের সাহায্য করে আধাসামরিক মোবাইল ফোর্স। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে পুলিশ মেরিটাইম উইংস নামে পরিচিত নেভাল ফোর্স। সীমান্ত নিরাপত্তার দায়িত্ব অর্পিত যৌথভাবে কাস্টমস ও অভ্যন্তরীণ আয়কর সংগ্রহকারী বাহিনীর ওপর।
ছয়টি প্রদেশে বিভক্ত ভানুয়াতুর যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম নৌপথ। ভানুয়াতু উইকলি নামের সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি সাপ্তাহিক রয়েছে। ডেইলি পোস্ট নামে দৈনিকটি সপ্তাহে ছয় দিন প্রকাশিত হয়। সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে।
I wanna go please halp how can i go vanuyatu
Can i go sir