বায়তুল মোকারম বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ। মসজিদটি রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র পল্টনে অবস্থিত। ৮.৩০ একর জায়গা নিয়ে মসজিদটির নির্মাণ কার্য সম্পন্ন হয় ১৯৬৮ সালে । এর স্থাপত্যশৈলী এবং অলংকরন এতটাই দৃষ্টিনন্দন যা আজও বহু মানুষের নজর কাড়ে।। তৎকালীন পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফ বাওয়ানি ও তার ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানির উদ্যোগে এই মসজিদ নির্মাণের পদক্ষেপ গৃহীত হয়। শুরুর দিকে এ মসজিদে ৩০,০০০ মুসল্লী একসাথে নামাজ আদায় করতে পারত তবে বর্তমানে এর সংখ্যা ৪০,০০০ হাজারে উন্নতি করা হয়েছে। ২০০৮ সালে সৌদি সরকারের অর্থায়নে মসজিদটি সম্প্রসারিত করা হয়। ধারন ক্ষমতার দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম মসজিদ। শুক্রবারের জুম্মার সময়, রমজান, শবে-বরাত, শবে-কদর, ঈদ উল ফিতর, ঈদ উল আদ্হাতে মুসল্লিদের সবচেয়ে বেশি সমাগম হয়।
আব্দুল লতিফ ইব্রাহীম বাওয়ানি প্রথম ঢাকাতে বিপুল ধারণক্ষমতাসহ একটি বৃহত্তর মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন। ১৯৫৯ সালে ‘বায়তুল মুকাররম মসজিদ সোসাইটি’ গঠনের মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। মসজিদটি যেখানে নির্মান করা হয় সেখানে একটি পুকুর ছিল। পল্টন পুকুর নামে পরিচিতি ছিল জায়গাটির। এছাড়াও এই জায়গাটি ছিল পুরান ঢাকা ও নতুন ঢাকার মিলনস্থল। এছাড়াও স্থানটি নগরীর প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র থেকেও ছিল নিকটবর্তী। পরে পুকুরটি ভরাট করে ২৭ জানুয়ারি ১৯৬০ সালে পাকিস্তানের রাস্ট্রপতি আইয়ুব খান মসজিদের কাজের উদ্ভোধন করেন।
বিশিষ্ট স্থপতি আব্দুল হুসেন থারিয়ানিকে মসজিদ কমপ্লেক্সটির নকশার জন্য নিযুক্ত করা হয়। পুরো কমপ্লেক্স নকশার মধ্যে দোকান, অফিস, গ্রন্থাগার ও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়। মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবার পর শুক্রবার, ২৫ জানুয়ারি ১৯৬৩ সালে প্রথমবারের জন্য এখানে নামাজ পড়া হয়।
কিছু তথ্য
1. মক্কাতে অবস্থিত পবিত্র কাবা শরিফের অনুরূপে তৈরিকৃত বায়তুল মোকাররমের নকশাই মসজিদটিকে করছে আকর্ষনীয়।
2. সজিদের প্রধান ভবনটি আট তলা এটি মাটি থেকে ৩০.১৮ মিটার বা ৯৯ ফুট উঁচু । সাদা রংয়ের মুল ভবনের প্রবেশ পথ পূর্দিকে। পূর্ব দিকের সাহানটি ২৬৯৪.১৯ বর্গ মিটারের। এর দক্ষিণ ও উত্তর পার্শ্বে ওযু করার জন্য জায়গা রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে, মসজিদে প্রবেশ করার বারান্দার উপর দুটি ছোট গম্বুজ নির্মাণের মাধ্যমে প্রধান ভবনের উপর গম্বুজ না থাকলেও এর সৌন্দায্যের কোন কমতি থাকেনি।
3. মসজিদে প্রবেশ করার বারান্দাগুলিতে তিনটি অশ্বখুরাকৃতি খিলানপথ রয়েছে, যার মাঝেরটি পার্শ্ববর্তী দুটি অপেক্ষা বড়। দুটি উন্মুক্ত অঙ্গণ (ছাদহীন ভিতরের আঙ্গিনা) প্রধান নামাজ কক্ষে আলো ও বাতাসের চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করে। তিন দিকে বারান্দা দ্বারা ঘেরা প্রধান নামাজ কক্ষের মিহরাবটির আকৃতি আয়তাকার, যার আয়তন ২৪৬৩.৫১ বর্গ মিটার। সমগ্র মসজিদ জুড়েই অলংকরণের আধিক্যকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
4. মুঘল শৈলীতে তৈরী করা হয়েছে বাগান। যা মসজিদটিকে আরও আকর্নীয় করে তুলেছে।
১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। বর্তমানে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদটি আটতলা। নিচতলায় রয়েছে বিপণিবিতান ও একটি বৃহত্তর অত্যাধুনিক সুসজ্জিত মার্কেট কমপ্লেক্স। দোতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত প্রতি তলায় নামাজ পড়া হয়। এখানে মহিলা ও পুরুষের আলাদা নমাজের ব্যবস্থা রয়েছে।