পুঠিয়া রাজবাড়ী (Puthia Rajbari) বাংলার প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের মধ্যে অন্যতম। যার স্থান পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত আমের রাজ্য রাজশাহীতে। ১৮৯৫ সালে মহারানি হেমন্তকুমারী দেবী ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্য রীতিতে আয়তাকার দ্বিতল রাজবাড়িটি নির্মাণ করেন। যেখানে গেলে আপনি পেয়ে যাবেন ইতিহাসের ও ঐতিয্যের ছোঁয়া। বিভাগীয় শহর রাজশাহী থেকে ৩০ কিলোমিটার দুরে এবং রাজশাহী-নাটোর মহাসড়ক থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরেই পুঠিয়া রাজবাড়ীর অবস্থান। বর্তমানে পুঠিয়া রাজবাড়ী লস্করপুর ডিগ্রি কলেজ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯৭৩ সালে রাজবাড়িতে পুঠিয়া ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।তবে এই ইতিহস সমৃদ্ধ রাজবাড়িটি প্রত্নতত্ন অধিদপ্তরের আওতাধীন রয়েছে।
পুঠিয়া রাজবাড়ীর রয়েছে মজার ইতিহাস। সপ্তদশ শতকে মুঘল আমলে জমিদার নীলাম্বর সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে ‘রাজা’ উপাধি লাভ করেন। তারপর পুঠিয়া জমিদার বাড়ি থেকে রাজবাড়ি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৭৪৪ সালে জমিদারি ভাগ হয়। সেই ভাগাভাগিতে জমিদারের বড় ছেলে পান সম্পত্তির সাড়ে পাঁচআনা এবং অন্য তিন ছেলে পান সাড়ে তিনআনা। ১৯৫০ সাল পর্যন্ত জমিদারি প্রথা ছিল। প্রথা বিলুপ্ত হলে পুঠিয়া রাজবাড়ির জমিদারিও বিলুপ্ত হয়। তবে প্রাসাদটি ১৮৯৫ সালে হেমন্তকুমারী দেবী তাঁর শাশুড়ি মহারানী শরৎ সুন্দরী দেবীর সম্মানে নির্মাণ করেন।
ইতিহাস ও ঐতিয্য সমৃদ্ধ পুঠিয়া রাজবাড়ী টি পুঠিয়া বাজারের দক্ষিন পার্শে অবস্থিত। বহু কক্ষ বিশিষ্ট রাজবাড়িটির উত্তর দিকে রয়েছে এর সিংহ দরজা। মূলত জমিদাররা এবং রাজা এখানে রাজকার্য পরিচালনা করতেন। জমিদাররা নিজেদের সুরক্ষার জন্য রাজবাড়ীর চারিধারে নির্মান করেন জলাশয়। রাজবাড়ীর চারদিকে রয়েছে পরিখা। এ পরিখাগুলোর নামও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন যেমন: শিব সরোবর বা শিব সাগর, গোপাল চৌকি, বেকি চৌকি, গোবিন্দ সরোবর বা মরা চৌকি। এছাড়াও শ্যামসাগর নামে একটি বিশাল পুকুর রয়েছে রাজবাড়ির মধ্যস্থালে। মোট ৩১.৬ একর জমি নিয়ে ঠায় দাড়িয়ে আছে এ রাজবাড়িটি এর মধ্যে ২৫.০৬ একর স্থলভাগ আর বাকী ৬.০০ একর জলভাগ শ্যামসাগর নিয়ে গঠিত।
পুঠিয়া রাজবাড়ী কি ভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে সড়ক , রেল এবং আকাশ পথে যাওয়ার সু ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকার গাবতলী, কল্যানপুর থেকে গ্রীন-লাইন, দেশ ট্রাভেল এসি বাস রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় । ভাড়া পড়বে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। এছাড়াও নন এসি বাস যেমন হানিফ, শ্যমলি বাবুল এন্টাপ্রাইজ ছাড়ে যার ভাড়া পড়বে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে।
এছাড়াও রেল পথেও যেতে পারেন রাজশাহী। ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে রবিবার ব্যতীত সপ্তাহে ৬ দিন দুপুর ২.৪০ মিনিটে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। আর পদ্মা এক্সপ্রেস মঙ্গলবার ব্যতীত বাকী ৬ দিন রাত ১১.১০ মিনিটে ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এসব ট্রেনে ভাড়া পড়বে শোভন চেয়ার ৩৫০ টাকা, স্নিগ্ধা৬১০ টাকা, এসি সিট ৭২৫ টাকাএবং এসি বার্থ ১০৮১ টাকা।
আকাশ পথে রাজশাহী যেতে চাইলে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দ থেকে বাংলাদেশ বিমান কিংবা ইউনাইটেট এয়ারওয়ে বিমানে যেতে পারবেন। ভাড়া পড়বে ৩৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকা।
কোথায় থাকবেন:
পুঠিয়ায় রাত্রি যাপনের জন্য জেলা পরিষদের ২ টি ডাকবাংলো রয়েছে। জেলা পরিষদের অনুমতি নিয়ে এবং নির্ধারিত ভাড়া পরিশোদ করে রাত্রী যাপন করা যায়। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ফোন নং: ০১৭২১৭৭৬৩৪৮ । এছাড়াও পুঠিয়া বাসস্ট্যান্টের কাছে আবাসিক হোটেল রয়েছে সেখানেও রাত্রীযাপন করা যাবে।
রাজশাহী শহরে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পারেশনের মোটেলেও থাকতে পারবেন যার ভারা পড়তে পারে ১৯০০ থেকে ৪৬০০ টাকার মধ্যে। চাইলে ঢাকা থেকেও বুকিং দিতে পারেন। ফোন নং : ০২-৮৮৩৩২২৯, ৮৮৩৪৬০০ মোবাইল নং: ০১৭২১৭৭৫২৩৭
কয়েকটি আবাসিক হোটেলের ফোন নং
হোটেল হক্স ইন- ০১৭২১৮১০৪২০
নাইস ইন্টারন্যাশনাল-০১৭২১৭৭৬১৮৮
মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল- ০১৭২১৭৭১১০০
শুকরান-০১৭২১৮১১৪৭০