পর্তুগাল ফুটবল তারকা ক্রিস্টায়ানো রোনালদোর দেশ পর্তুগালের কথা উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে চোখের সামনে ভেসে ওঠে ভাস্কো-ডা-গামার কথা যিনি কিনা জাহাজে ঘুরে ঘুরে দেশ আবিষ্কার করতেন। এটি দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। এটি আইবেরীয় উপদ্বীপের পশ্চিম অংশে, স্পেনের দক্ষিণে ও পশ্চিমে অবস্থিত।আটলান্টিক মহাসাগরে দেশটির দীর্ঘ উপকূল রয়েছে। এছাড়াও দুইটি স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপপুঞ্জ পর্তুগালের নিয়ন্ত্রণাধীন; এগুলি হল আসোরেস দ্বীপপুঞ্জ এবং মাদেইরা দ্বীপপুঞ্জ, যারা উভয়েই আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত। লিসবন পর্তুগালের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। এই দেশের বর্তমান মোট জনসংখ্যা প্রায় 2 কেটি। ১৫শ শতকের দিকে পর্তুগাল ছিল ইউরোপের প্রধান সমুদ্রাভিযান কেন্দ্র।পর্তুগিজ নাবিকেরা তখন বিশ্বভ্রমনে বেরিয়ে পড়ত সেই সাথে সমুদ্রবানিজ্য নিয়ন্ত্রন করত অত্যান্ত দাপটের সাথে। প্রায় ১০০ বছর পর্তুগিজরা দাপিয়ে বেড়ায় পুরো পৃথিবী জুড়ে।অবশেষে ১৬শ শতকের দিকে তাদের এই ক্ষমতার অবসান ঘটে এশিয়ার অনেকগুলি উপনিবেশ হারিয়ে। তবে পর্তুগাল তার বৃহত্তম উপনিবেশ ব্রাজিলের উপর ১৯শ শতক পর্যন্ত এবং তার বিশাল আফ্রিকান সাম্রাজ্যের উপর ২০শ শতক পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। একসময়ের অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন পর্তুগালের অধীনে বিশ্বের এক বিশাল স্থলভাগ থাকলেও এটি ইউরোপের সবচেয়ে অনুন্নত দেশগুলির একটি।
পর্তুগালের অবস্থান ইউরোপের দক্ষিন-পশ্চিম সাইবেরিয়ান উপদ্বীপে।পর্তুগাল মুলত সাইবেরীয় উপদ্বীপের পশ্চিমে এবং স্পেনের দক্ষিণে ও পশ্চিমে অবস্থিত। আটলান্টিক মহাসাগরে দেশটির দীর্ঘ উপকূল রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে দুইটি স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপপুঞ্জ এগুলি হলো আসোরেস দ্বীপপুঞ্জ এবং মাদেইরা দ্বীপপুঞ্জ, যারা উভয়েই আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত। লিসবন পর্তুগালের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।
৮৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত পর্তুগাল একটি প্রাচীন দেশ। প্রাগঐতিহাসিক কাল থেকেই এরা নানান যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত ছিল তাই কখনো কিছু অর্জন করেছে আবার কখনো অনেক কিছু হারিয়েছে। তবে ১১২৮ সালে কাউন্টি সাও মামেদের সঙ্গে যুদ্ধের পরে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছিল। ১৫শ সাল থেকে ১৬শ সাল পর্যন্ত পর্তুগাল বিশ্বের প্রথম বৃহত্তম অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে, প্রথম বৈশ্বিক সামুদ্রিক এবং বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। এবং এই সময়কালে পর্তুগিজ এক্সপ্লোরাররা সমুদ্রসংশ্লিষ্ট অনুসন্ধানের সূচনা করেছিলেন, বিশেষত প্রিন্স হেনরি নেভিগেটর এবং দ্বিতীয় কিং জনের রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায়, বার্তোলোমিউ ডায়াস সমুদ্রযাত্রা করেন এবং ভাস্কো দা গামার ভারতে সমুদ্র পথের আবিষ্কার করেন।
পোর্টাস কেল থেকে উৎপত্তি পর্তুগাল শব্দটির থেকে। বাস্তবে কেল ছিল দোরু নদীর মোহনায় অবস্থিত একটি প্রাচীন জনবসতির নাম। বর্তমান পর্তুগাল দেশটির উত্তরাংশ দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে এই নদীটি আটলান্টিক মহাসাগরে পড়েছে। ক্ষমতা আর প্রাচুর্য নিয়ে যথেষ্ট দাপট ছিল পর্তুগালের কিন্তু ১৫৭৮ খ্রিষ্টাব্দে আল কাথারকিবিরের যুদ্ধের পর থেকেই তার পতনের সূচনা ঘটে। ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনাপর্বে নেপলিয়নীয় যুদ্ধে এবং ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে তার বৃহত্তম উপনিবেশ ব্রাজিল স্বাধীনতা ঘোষণা করলে দেশটির অর্থনীতি অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় নিমজ্জিত হয় ও রাজনৈতিক প্রভাব হ্রাস পায়। ১৯১০ সালে এক অভ্যুত্থানে রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটে ও প্রজাতন্ত্র স্থাপিত হয়।
এবারে পর্তুগালের মজার কিছু বিষয় শেয়ার করব।
১. পর্তুগালে মোট ৯ টি সরকারি ভাষা রয়েছে এবং অনেকেই ভারতের গোয়া ভাষাও ব্যবহার করেন।
২. বিশ্বের প্রচীনতম বইয়ের লাইব্রেরীর অবস্থান পর্তুগালের রাজধানি লিসবনে । বারট্র্যান্ড বুকশপ নামের এই লাইব্রেরীটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল 1732 সালে ।
৩. পর্তুগালের উপূকুলে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সার্ফ স্পট যার আয়তন ৪৯৭ মাইল।
৪. আইডিকাডের্র জন্য পর্তুগালই বিশ্বের প্রথম ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রচলন চালু করে ।
৫.ইউরোপ মহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় ইনিভসির্টি অব কোইমব্রা পর্তুগালে অবস্থিত এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১২৯০ সালে।
৬. পর্তুগালের লিসবনে রয়েছে ইউরোপের সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু ভাস্কো-ডা-গামা ব্রিজ যার আয়তন ১৭ কিলোমিটার।
৭. ১৭৫৫ সালে লিসবনে শক্তিশালী ৯ মাত্রার একটি ভুমিকম্প আঘাত হানে একই সাথে সুনামি হয় সেই সাথে আগুনে ভস্মিভুত হয়। এতে ৮৫% দালান কোঠা সম্পূর্ন ভাবে ধ্বংশ হয়ে যায় আর ২৭৫,০০০ লোক মারা যায়। সবচেয়ে বড় কথা সেদিন পর্তুগালে ছূটির দিন ছিল।
৮. বিশ্বের বৃহত্তম কর্ক প্রস্তুত কারী দেশ পর্তুগাল । কারন পর্তুগালে সবচেয়ে বেশি কর্ক গাছের জন্ম আর এই গাছের ছাল দিয়েই কর্ক বানানো হয়।
৯. এই দেশের উত্তরের ভূমি পর্বতময় ও সবুজে ছাওয়া; এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং শীতল। এই অঞ্চলটি, বিশেষ করে দোউরু নদীর উপত্যকা আঙুরক্ষেতের জন্য বিখ্যাত। এখান থেকে পর্তুগালের বিখ্যাত পোর্ট ওয়াইনের জন্য আঙুর উৎপাদিত হয়। পর্তুগালের মধ্য ও দক্ষিণ ভাগ উষ্ণতর এবং শুষ্কতর। এখানে আঙ্গুর ছাড়াও গম ও অন্যান্য কৃষিদ্রব্য উৎপাদিত হয়। এখানে কর্ক, ওক ও জলপাই গাছও জন্মে। দেশের একেবারে দক্ষিণে আলগার্ভে নামের অঞ্চলটি উষ্ণ গ্রীষ্মকাল এবং মাইলের পর মাইল জুড়ে বিস্তৃত রৌদ্রোজ্জ্বল বেলাভূমির জন্য পরিচিত।
১০. পর্তুগালের ওয়াইন সারা পৃথিবী ব্যাপী বিখ্যাত। আঙ্গুর এর ওয়াইন জন্য ইউরোপ ও আমেরিকাতে এই দেশের রয়েছে আলাদা কদর।