পদ্মা রিসোর্ট ঢাকা বিভাগের মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার লৌহজং থানায় পদ্মানদীর তীরে এর অবস্থান। ঢাকা থেকে পদ্মা রিসোর্ট দুরত্ব মাত্র ৫০ কিলোমিটার। যাদের নিজেস্ব পরিবহন রয়েছে তারা মাত্র দুই ঘন্টাই পৌছে যেতে পারবেন পদ্মা রিসোর্ট এ।
পদ্মা রিসোর্ট (Padma Resort) টি অবসর কাটানোর জন্য একটি মনোরম পরিবেশ। নাগরিক ব্যাস্ততা রেখে নিজেকে এবং প্রিয়জনকে সময় দিতে চাইলে যেতে পারেন পদ্মা রিসোর্ট এ। পদ্মা নদীর বাতাস,শান্ত পরিবেশ, পাখির কিচিরমিচির ডাক আপনার মনকে শান্ত করবে। রাত্রী যাপনের জন্য রয়েছে সু ব্যবস্থা। পদ্মা রিসোর্ট এ রয়েছে মোট ১৬ টি কটেজ। প্রতিটি কটেজেই রয়েছে একটি মাস্টার বেডরুম, দুটি সিঙ্গেল বেডরুম ও একটি বড় ড্রইং রুম। এছাড়াও রয়েছে একটি বাথরুম ও দুটি সুন্দর ব্যেলকনি। মোটামুটি ৮ জনের মত থকা যায়। সাজানো- গোছানো এ কটেজগুলো তৈরী করা হয়েছে বাশ ও তাল গাছের কাঠ দিয়ে। এছাড়িাও ব্যবহার করা হয়েছে সুন্দরী গাছের পাতা। প্রকৃতির মাঝে প্রকৃতির ঘরে থাকার মজাই আলাদা।ঋতু ভেদে পদ্মা রিসোর্ট সৌন্দর্য্য একেক রকম। যেমন বর্ষকালে মনে হবে পানির রাজ্যে ভাসমান দ্বীপ আবার শীতকালে পদ্মা রিসোর্ট সাজে নানান রঙের ফুলে। সবচেয়ে মজার ব্যপার হল ১৬ টি কটেজের মধ্যে ১২ টি কটেজের নাম দেওয়া হয়েছে বাংলা ১২ মাসের নাম অনুসারে আর বাকী ৪ কটেজের নাম দেওয়া হয়েছে ঋতুর নাম অনুসারে। রিসোর্টটি নির্মাণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মাদ আলী। তিনি দীর্ঘদিন যাবত জাহাজের ব্যবসা করেছেন যার নাম ছিল গোল্ড স্টার লাইন। তার নিজ গ্রামের বাড়ি লৌহজং উপজেলায়। তিনি পর্যটকদের সব ধরনের বিনোদনের কথা বিবেচনা করেই এই রিসোর্টটি নির্মাণ করেন।
পদ্মা রিসোর্ট যেতে হলে লৌহজং থানা ঘাটে এসে পাবেন দুইটি ট্রলার। যা শুধুমাত্র পদ্মা রিসোর্টে যাওয়ার জন্য পর্যটকদের আনা-নেওয়া করা হয়। ট্রলারে উঠলে ভাড়া নিবে মাত্র ৫০ টাকা। আর বলে রাখা ভালো যে, এই ৫০ টাকার মধ্যেই তারা রিসোর্টে প্রবেশ ফি এবং ভ্রমন শেষে যাওয়ার জন্য ট্রলার খরচ নিয়ে নিয়েছে (১০ টাকা ট্রলার খরচ এবং ৪০ টাকা রিসোর্টের এন্ট্রি ফি) ।
পদ্মা রিসোর্টের প্রকৃতির সাথে আরও কিছুটা সময় উপভোগ করতে চাইলে এখানে কটেজ ভাড়া নিয়ে কিছুটা সময় থাকতে হবে। পদ্মা রিসোর্টে অনেক কম খরচে ভালো মানের কটেজ পাওয়া যায়। প্রতিটি কটেজের ১৫% ভ্যাট বাবদ দৈনন্দিনের ভাড়া নিচে দেওয়া আছেঃ
সময়সূচী | মূল্য |
সকাল ৯:০০ টা থেকে বিকাল ৫:০০ টা পর্যন্ত——– | ২৩০০ টাকা মাত্র |
সন্ধ্যা ৬:০০ টা থেকে পরদিন সকাল ৯:০০ টা পর্যন্ত | ২৫০০ টাকা মাত্র |
সম্পূর্ণ দিন(দিন+রাত ২৪ ঘণ্টা) | ৩৫০০ টাকা মাত্র |
মূলত পর্যটকদের বিনোদনের কথা বিবেচনা করে এখানে দূর থেকে দূরান্তর ছুটে আসা মানুষগুলোর জন্য আছে সর্বোপরি বিনোদনের ব্যবস্থা। এখানে আছে ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট খেলার জন্য সু-ব্যবস্থা। চাইলেই বন্ধু-বান্ধব বা পরিবার-পরিজনদের নিয়ে করতে পারেন বারবিকিউ পার্টি। অথবা বিশাল সুবিস্তৃত এই বালুচরে করতে পারেন কোন এক পিকনিকের আয়োজন। এখানে আছে ছোট-বড় সবার জন্য খেলার ব্যবস্থা। নদীর পানির টলটল শব্দ আরও কাছ থেকে শুনতে চলে যেতে পারেন পদ্মার পাড়ে। সেখানে বোটের সুব্যবস্থা আছে। চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন পদ্মার বুক জুড়ে।
রিসোর্টে আছে তিন ধরনের বোট ভ্রমনঃ
স্প্রিডবোট রাইডঃ পদ্মা রিসোর্টে যেয়ে শীতল পানিতে সাঁতার কাটা অথবা স্প্রিডবোটে পুরো পদ্মার বুকে পাড়ি দিয়ে ঘুরে আসতে লাগবে ঘণ্টায় জনপ্রতি ২৫০০ টাকা মাত্র।
সাম্পান রাইডঃ পদ্মা নদীর পাড়ে গেলে পাওয়া যাবে স্প্রিডবোট, সাম্পান অথবা ট্রলারে করে নদী ভ্রমনের সুবিধা। তবে বোট ভেদে টাকার পরিমাণ কম-বেশি আছে। যারা সাম্পানে উঠবেন তাদের জন্য ঘণ্টায় জনপ্রতি ১২০০ টাকা নিবে।
ট্রলার রাইডঃ আর যারা ট্রলারে করে যেতে চান তাদের ক্ষেত্রে জনপ্রতি ৬০০ টাকা করে নিবে সম্পূর্ণ পদ্মা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
সারাদিন রোদে পুড়ে প্রকৃতির মাঝে ঘুরে এই ক্লান্ত শরীর ও পেটকে শান্ত করার জন্য মরিয়া হয়ে নিশ্চয়ই যে কোন খাবার হোটেল খুঁজবেন? কি তাই না? তবে বলে রাখা ভালো যে রিসোর্টের আশেপাশে ভালো কোন খাবার হোটেল নেই।
কিন্তু পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে রিসোর্টের ভিতরে একটি হোটেল আছে। যেখানে অনায়াসে ২০০ জন লোক একসাথে বসে খেতে পারে। আপনি চাইলেই লাঞ্চ বা ডিনারসহ যেকোনো পার্টি বা পিকনিকের বন্দোবস্ত করতে পারেন এখানে। এই হোটেলটিতে কর্মচারীরা সর্বক্ষণ পর্যটকদের সেবায় ব্যস্ত থাকে। খুব সুন্দর ডেকোরেশন এর মাধ্যমে মোট ২০টি চেয়ার দ্বারা সাজানো হয়েছে এই হোটেল।
তবে এখানের খাবারের ম্যানুর তুলনায় দামটা তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি। তাই যেহেতু রিসোর্টে ঢুকার সময় কোন প্রকার চেকিং করা হয় না সেহেতু ব্যাগে করে বাসা থেকে খাবার নিয়ে এলে আপনাদের জন্যই ভালো হবে। এছাড়াও এখানে খেতে হলে আপনাকে আগে হোটেল অফিস থেকে ফুড টোকেন সংগ্রহ করতে হবে।
ফুড টোকেনের ফুল প্যাকেজটি নিচে দেওয়া আছেঃ
সময়সূচী | ম্যানু | মূল্য |
সকাল | পরোটা, ডাল, সবজি, ডিম ভাজা, চা। | ১০০ টাকা মাত্র |
দুপুর | ভাত, ডাল, ইলিশ ভাজা (১পিস), মুরগি মাংস (বড় ১পিস), বেগুন ভর্তা, সবজি, সালাত। | ৪৫০ টাকা মাত্র |
রাত | ভাত, ডাল, ইলিশ ভাজা (১পিস), মুরগি মাংস (১পিস), বেগুন ভর্তা, সবজি, সালাত। (কেউ মোরগ-পোলাও খেতে চাইলে অর্ডার করলে তারা দিবে) | ৪৫০ টাকা মাত্র |
সাথে কোমল পানীয়র মূল্য নিচে দেওয়া আছেঃ
বিভিন্নতা | মূল্য |
মিনারেল ওয়াটার ১ লিটার | ৪০ টাকা |
ক্যান | ৪০ টাকা |
পেপসি ১.৫ লিটার | ১০০ টাকা |
পেপসি ২ লিটার | ১৫০ টাকা |
পদ্মার হাওয়ায় ভাসতে চাইলে অবশ্যই পদ্মা রিসোর্টে যেতে হবে। বাংলার এই অপরূপ প্রকৃতি দেখার জন্য পদ্মা রিসোর্টে এখন সবসমই পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। তাই সরকারি ছুটির দিনগুলোতে রিসোর্টে গেলে কটেজগুলো খালি পাওয়া যায় না। আর এ জন্য ছুটির দিনগুলতে যেতে হলে অবশ্যই যাবার আগে কটেজ বুকিং দিয়ে দিবেন। তাহলে আর ঝামেলা পোহাতে হবে না। কটেজ বুকিং করতে হলে তাদের ঢাকা অফিসে আপনাকে বুকিং মানি দিয়ে বুক করতে হবে।
পদ্মা রিসোর্টের কটেজ বুকিং করতে চাইলে সরাসরি যোগাযোগ করুনঃ
এস এম নজরুল ইসলাম (জেনারেল ম্যানেজার)
মবাইলঃ ০১৭১২১৭০৩৩০ অথবা ০১৭৫২৯৮৭৬৮৮
টেলিফোনঃ ৮৭৫২৬১৭
এছাড়াও যারা পদ্মা রিসোর্ট ও কটেজ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তারা যোগাযোগ করুন সরাসরি পদ্মা রিসোর্ট অফিসেঃ
সাদিক হোসেন(মান্না)
০১৭২৬৩০৬৫১৬ অথবা ০১৬২৫৭৮৮৯২০
রিসোর্টের মোবাইল নাম্বারঃ ০১৭৪৬০২৬১৩৪
বি.দ্র. শুক্রবার ব্যাতিত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সকল তথ্য জানার জন্য যোগাযোগ করা যাবে।
কি ভাবে যাবেন পদ্মা রিসোর্ট
মিরপুর ১০ নাম্বার, ফার্মগেট, শাহবাগ থেকে আপনি যেতে পারেন স্বাধীন পরিবহন করে। আবার মাওয়া ঘাট পর্যন্ত যেতে পারেন গ্রেট বিক্রম অথবা গোধূলি পরিবহনে। ভাড়া নিবে জনপ্রতি ৭০ টাকা করে। সেখান থেকে মাওয়া ফেরিঘাট যাওয়ার পূর্বে লৌহজং থানা যাওয়ার পথে আপনাকে মাওয়া চৌরাস্তা নামতে হবে। চৌরাস্তা নেমে রিক্সা অথবা অটোরিক্সা করে ১০ মিনিটের পথ পদ্মা রিসোর্ট।
সায়েদাবাদ, গুলিস্তান স্কোয়ার মার্কেটের পূর্ব পাশে ও যাত্রাবাড়ী গোলচত্তরের পূর্ব-দক্ষিন দিক থেকে ঢাকা- মাওয়া এবং ঢাকা- লৌহজং যাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা, মাওয়া-ইলিশ,আরাম, স্বাধীন, গাংচিল ও বিআরটিসি এসি ও নন এস বাস ছাড়ে। নামবেন মাওয়া চৌরাস্তা। আর গাংচিল বাসটি একদম রিসোর্টের ঘাট পর্যন্ত আসে তাই বেশিরভার লোকেরাই এই বাসটিতে যাতায়াত করে। ভাড়া নিবে জনপ্রতি এসি ১১০ টাকা ও নন এসি ৮০ টাকা করে। সেখান থেকে অটোতে মাত্র ৩০ টাকা দিয়ে আপনি পৌঁছে যাবেন পদ্মা রিসোর্ট এর মনোরম এই পরিবেশটিতে।
আর আপনার যদি থাকে ব্যাক্তিগত প্রাইভেট কার তাহলে তো কথাই নেই! পদ্মা রিসোর্ট ভ্রমনের যাত্রাপথে আপনাকে দুই জায়গায় মোট ৬০ টাকা টোল দিতে হবে। আর আপনার গাড়িটি রাখার জন্য লৌহজং থানার পাশে জায়গা আছে। আর মসজিদ ঘাটেই আছে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও স্প্রিডবোট যার মধ্যমে আপনি রিসোর্টে প্রবেশ করা ও পুনরায় আবার ফিরে আসতে পারবেন। ভাড়া নিবে মাত্র ৫০ টাকা।
নারায়ণগঞ্জ থেকে মাত্র ২৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পদ্মা রিসোর্ট। নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনাল থেকে দিঘিরপাড় পরিবহন করে মুক্তারপুর ব্রিজে নামতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি করে সরাসরি আপনি চলে যেতে পারেন পদ্মা রিসোর্টে। সিএনজিতে ভাড়া ১০০ থেকে ১২০ টাকা নিবে। যেতে সময় লাগবে মাত্র ২ ঘণ্টা।