দুবাই সারা পৃথিবীর ভ্রমন পিয়াশু মানুষের আকর্ষনীয় জায়গার নাম হল দুবাই। আভিজাত্য, অর্থ আর নানান রকম আবিষ্কারের দেশ দুবাই মনুষকে শুধু কাছেই টানেনা বরং ইতিহাস ও তৈরী করে। তেল সমৃদ্ধদেশ হিসেবে দুবাই বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত হলেও আজকের দুবাই পর্যটন নগরী বা বিলাসবহুল দেশ হিসেবেই পরিচিত।
দুবাই পারস্য উপসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত।দুবাই সংযুক্ত আরব আমিরাতের পারস্য উপসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা প্রায় ১৬ মিটার বা ৫২ ফুট। দুবাই দক্ষিণে আবু ধাবি, উত্তর-পূর্বে শারজাহ এবং দক্ষিণ-পূর্বে ওমানের সাথে সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে। দুবাই একটি বৈশ্বিক শহর এবং মধ্য প্রাচ্যের প্রধান ব্যবসায় কেন্দ্র। তেল উৎপাদনকারী শহর হিসেবে বিশ্বের কাছে সমাদৃত। তবে বর্তমানে বিশ্ববাসীর কাছে পর্যটন নগরী হিসেবেই পরিচিত। বিশ শতকের গোড়ার দিকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি কেন্দ্র ছিল, দুবাইয়ের অর্থনীতি বাণিজ্য কর, পর্যটন, বিমানচালনা, রিয়েল এস্টেট এবং আর্থিক পরিষেবা থেকে প্রাপ্ত আয়ের উপর নির্ভরশীল। দুবাই বড় বড় নির্মাণ প্রকল্প, হোটেল এবং বড় বড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
১৮শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে দুবাই একটি মাছধরার গ্রাম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে মনে করা হয় এবং ১৮২২ সালের মধ্যে বনি ইয়াস উপজাতির প্রায় ৭০০-৮০০ সদস্যের একটি শহরে পরিণত হয়, এটি আবুধাবির শেখ তাহনুন বিন শাকবুতের অধীনে ছিল। মাছ ধরার গ্রাম এই দুবাই এখন বিশ্বের ধনী দেশ হিসেবে পরিচিত। তেল উত্তলনকারী দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও বিশ্বের দরবারে দুবাই এখন অতি আধুনিক পর্যটন নগরী হিসেবে পরিচিত।
দুবাইয়ের চাকচিক্য আর আকাশ ছেয়া বহুতল ভবন সারা বিশ্বের মানুষের কাছে আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু। তবে দুবােইয়ের বহুতল ভবন তৈরীর পিছনে অনেক বড় একটি কারন রয়েছে । ধারনা করা হয়েছে দুবাইয়ের মূল অর্থনীতি নির্ভর করে তেল রপ্তানীর উপরে যা হয়তা অচিরেই ফুরিয়ে যাবে। তাই অর্থণীতির প্রবিদ্ধি ধরে রাখার জন্যই বহুতল ইমারত নির্মানের কারন। জানা যায় ২০০৮ সাল থেকে দুবাইয়ে বার্ষীক জিডিপির সিংহভাগ অংশ আসে পর্যটন খাত থেকে।
দুবাইয়ে রয়েছে রাক্সারী সব হোটেল-মোটেল। বুর্জ-আল খলিফা, পাম বিচ কে পাঁচ তারকা হোটেল বললেও এর কিছু রুম এধুনিক সাত তারকা হোটেলকেও হার মানায়।
দুবাই কে বলা হয় স্বর্নর শহর। দুবাইতে সোনা খাওয়াও হয়। রয়েছে সোনার এটিএম বুধ। লাক্সারীয়াস হোটেল-মোটেল এমন কি শপিংমল নির্মানে ব্যবহার করা হয়েছে সোনা।
দুবাই বিঞ্জান প্রযুক্তি থেকেও পিছিয়ে নেই। সমুদ্রের মধ্যে ইমারত তৈরী করে প্রমান করেছে তাদের উন্নত প্রকৌশলী ব্যবস্থা। উটের দোড় তাদের দেশে প্রধান খেলা। সেখানে উটের পিঠি জকি হিসেবে মানুষের পরিবর্ত ব্যবহার করছে রোবট। প্রতিটা রোবট তৈরীতে ব্যয় হয়েছে ১০০০০ ডলার। শুধু তাই নয় তারা এখন আবহাওয়া নিয়ন্ত্রন করার চেস্টা করছে । পরীক্ষামূলক হিসেবে দুবাইয়ের একটা বিশেষ জায়গায় ১১ কিলেমেটার জুড়ে তারা আবহাওয়া নিয়ন্ত্রন করছে। সেখানে কৃত্তিম মেঘ ও বৃষ্টি তৈরী করছে।
চলুন জেনে নেই দুবাইয়ের কিছু মজার তথ্য
১. সোনার ভেন্ডিং মেশিন
দুবাইয়ে আছে সোনা তোলার বুথ। আর এটিকে তারা নাম দিয়েছে গোল্ড ভেন্ডিং মেশিন। নগদ টাকার বিনিময়ে আপনি ওই মেশিন থেকে ২৪ ক্যারেট খাঁটি সোনা সহজেই কিনে নিতে পারবেন। বিশ্ব বাজারে সোনার দাম উঠা-নামার কারণে প্রতি ১০ মিনিট পর পর মেশিনে মূল্য আপডেট করার সফটওয়্যার বসানো থাকে।
২. ফ্যাশনের কেন্দ্রবিন্দু
দুবাই শহরের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক এখানকার মানুষের ফ্যাশন বৈচিত্র্য। দুবাইয়ে ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে আসা নাগরিকদের বৈচিত্র্যময় ফ্যাশন শহরটিকে অন্যসব শহর থেকে আলাদা করেছে।
৩. ৮৩ শতাংশ বাসিন্দা বিদেশি
দুবাই শহরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষ সংখ্যা এতটাই বেশি যে, তা শতকরা ৮৩ শতাংশ। আর অবাক হলেও সত্য দুবাইয়ে মাত্র ১৭ ভাগ আমিরাতি নাগরিক বাস করে। ৮৩ ভাগ বিদেশি নাগরিকের বেশির ভাগ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের
৪. অনেক ক্রেনের ব্যবহার
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি উঁচু দালান তৈরি করা হয় দুবাইয়ে। প্রচুর পরিমাণ তেলের কূপও খনন করা হয় সেখানে। এজন্য সেখানে অনেক ক্রেন ব্যবহার করা হয়। পৃথিবীতে প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার বড় বড় ক্রেন আছে। এরমধ্যে শুধু দুবাইয়েই আছে ৩০ হাজারটি।
৫.সবচেরে উঁচু টেনিস কোর্ট
টেনিসে দুবাই বিশ্বসেরা না হলেও দেশটিতে রয়েছে পৃথিবীর সবচেরে উঁচু টেনিস কোর্ট। দুবাইয়ের বুরজ আল আরব হোটেলের ছাঁদে এটি বানানো হয়েছে।
৬. পাম আইল্যান্ড
রাজারা যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। তাঁদের আছে অঢেল সম্পদ ও আজ্ঞাবহ কর্মচারী। রাজারা বড়ই খেয়ালি। ইচ্ছে হলো সাগর বুকে দ্বীপ বানাবেন। ব্যস, শুরু হয়ে গেল কাজ। রূপকথার গল্পের মতো শোনালেও ঘটনাটি বাস্তব। দুবাইয়ের শান্ত সাগরের বুকে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম দ্বীপ। তাও আবার তিনটি। কৃত্রিম হিসেবে দ্বীপগুলো বিশ্বে যত বিস্ময় জন্ম দিয়েছে তার চেয়েও বেশি আকর্ষণ করছে এগুলোর আকৃতি। দ্বীপ তিনটি হুবহু পাম গাছ আকৃতিতে তৈরি করা হয়েছে। মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কৃত্রিম দ্বীপগুলোর নাম পাম জুমায়রা, পাম জাবেলে আলি, পাম দেইরা। পাম জুমায়রা ও পাম জাবেলে আলি যথাক্রমে জুন ২০০১ ও অক্টোবর ২০০২ সালে শুরু হয়ে নভেম্বর ২০১৪ সালে পাম জুমায়রার কাজ শেষ হয়।
দুবাই পৃথীবির আকর্ষনীয় শহরের একটি। অর্থ, বিত্ত আর জৌলশ দিয়ে পৃথিবীর বুকে জ্বল জ্বল করছে দুবাই।