চর কুকরি মুকরি ( Char Kukri Mukri) বাংলাদেশের চর কুকরি মুকরি ভোলা জেলার একটি অন্যতম জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। এটি ভোলা (Bhola) জেলায় অন্তর্গত। চর কুকরি-মুকরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। এক সময় এই চরে শুধু কুকুর আর ইঁদুর (স্থানীয়দের কাছে যা মেকুর নামে পরিচিত) ছাড়া আর তেমন কিছুই চোখে পড়তো না। তাই স্থানীয়রা এর নামকরন করেন চর কুকরি মুকরি নামে। তবে ঐতিহাসিকভাবে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হয় ১৯১২ সালে এ চর জেগে উঠে। তৎকালীন জার্মান যুবরাজ প্রিন্স ব্রাউন জনমানবহীন এই চরে জাহাজ নিয়ে আসেন শিকারের উদ্দেশে। দেখতে পান একটি বিড়াল ও কুকুর ছোটাছুটি করছে। সেই দৃশ্যাবলী তাকে মনে করিয়ে দেয় নির্জন এই চরের নামকরণ। পরে জার্মানের অনূদিত রূপ হিসেবে বাংলায় যার নামকরণ হয়ে যায় চর কুকরি মুকরি। পর্তুগিজ ও ওলন্দাজরা দস্যুবৃত্তি লুটতরাজ করে এই চরে আশ্রয় নিত। চর কুকরি মুকরি ( Char Kukri Mukri) বাংলাদেশের ভোলা জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দুরে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর মোহনায় এর অবসাথান। চারদিকে জলরাসিদ্বারা বেষ্টিত প্রমত্তা মেঘনা নদীর উত্তল ঢেউয়ে পলি জমতে জমতে কয়েকশ বছর আগে জেগে ওঠে এ দ্বীপটি। প্রকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে জেগে ওঠা চরগুলো সংরক্ষণে ১৯৪৭ সাল থেকে এখানে বনায়ন করা হয়। পরে ১৯৮৯ সালে ১৪ মে বন বিভাগের তত্বাবধানে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার একর জমিতে সংরক্ষিত শ্বাসমূলী ম্যানগ্রোভ জাতীয় বৃক্ষের বনায়ন শুরু হয়। বনায়ন প্রক্রিয়ার এক পর্যায়ে এখানে স্থান পায় সুন্দরী, গেওয়া, পশুর ,কেওড়া, নারিকেল, বাশ ও বেত। বর্তমানে ভোলার কুকরি মুখরি চরে মোট বনভূমির পরিমান ৮৫৬৫ হেক্টর যার মধ্যে ২১৭হেক্টরই রয়েছে বন্যপ্রনীর অভয়াশ্রম হিসেবে আর বাকী ৪ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে বসতি এবং কৃষি আবাদের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এ বনভুমিতে জীবিত গাছের সংখ্যা প্রায় ৯ কোটিরও বেশি । চর কুকরি মুকরি ( Char Kukri Mukri) চরকে বলা হয় বন্য প্রানীর অভয় আশ্রম। চারদিকে জল বেষ্টিত এ চরে চিত্রা হরিণ, বানর, শিয়াল, উদবিড়াল, বন্য মহিষ-গরু, বনমোরগ, বনবিড়ালের দেখা পাওয়া যায়। এ ছাড়াও বক, শঙ্খচিল, কাঠঠোকরা, নীলকান্ত, মাছরাঙা, কোকিল, টিয়া, ঘুঘু, চ্যাগা, গাঙচিল, ঈগল, শকুন, পানকৌড়ি, শামুকখোলা ইত্যাদি নানান প্রজাতির পাখি ও সরীসৃপ রয়েছে কুকরি মুখরির চরে । শীতকালে এখানে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। তখন পাখির কলরবে মুখরিত থাকে পুরো কুকরি মুখরির চর। চর কুকরি মুকরি পরিষ্কার পরিছন্ন হওয়ায় পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষনীয়। চারদিকে বিশাল জলরাশি মাঝখানে পাখির কলকাকলিতে মুখর ঘন সবুজে ঘেরা একটি দ্বীপ ঠিক যেন রূপকথার সম্রাজ্য। মেঘনা নদী থেকে বয়ে যাওয়া ভাড়ানি খাল কুকরি মুখরির বুক চিড়ে মিশেছে বঙ্গবসাগরে। কুকরি মুকরির সবচেয়ে বড় আকর্ষন সমুদ্র সৈকত।পরিছন্ন কুকরি মুকরির সৈকতে দাড়িয়ে যখন সূর্যদোয় আর সূর্যাস্ত দেখা যায় মনে হয় এ যেন অপার সৌন্দায্যে ঘেরা কোন অদেখা ভুবনে দাড়িয়ে আছি। জানুয়ারী থেকে মার্চ কুকরি মুকরি যাবার আদর্শ সময়। এসময় চাইলে ক্যাম্পিং ও করা যায়। বর্ষায় চরের বেশিরভাগ জায়গাই ডুবন্ত থাকে তা ছাড়া সাপ-খোপের উপদ্রব বেড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে । চর কুকরি মুকরি কি ভাবে যাবেন: চর কুকরি-মুকরি যেতে নদীপথ সবচেয়ে সহজ উপায়। ঢাকার সদরঘাট থেকে ভোলাগামী লঞ্চে চড়ে ঘোষের হাট টার্মিনালে নামতে হবে। এরপর স্থানীয় যানবাহনে চর কচ্ছপিয়া ঘাট যেতে হবে। চর কচ্ছপিয়া থেকে জনপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা ভাড়ায় ট্রলারে চেপে পৌঁছাতে হবে চর কুকরি-মুকরি। প্রতিদিন সকাল ৯টা এবং দুপুর ১২টায় লোকাল ট্রলার চর কুকরি-মুকরির উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তাই ঝামেলা এড়াতে নির্দিষ্ট সময়ে চর কচ্ছপিয়া ঘাটে অবস্থান করুন। এ ছাড়া ট্রলার রিজার্ভ করেও যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ করতে হবে। চর কুকরি মুকরি থাকা-খাওয়া: এ ছাড়া বন বিভাগ, কোস্ট ট্রাস্ট এবং ইউনিয়ন পরিষদের রেস্ট হাউসে অনুমতি নিয়ে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। অবাসিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা খাবারের ব্যবস্থা করে থাকে। রেস্ট হাউজের কতৃপক্ষকে জানিয়ে রাখলে তারাই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে বাখবে। রেস্ট হাউজে যোগাযোগের নম্বার ০১৭৩৯৯০৮০১৩। |