কম্বোডিয়ার দর্শনীয় স্থান ও ইতিহাস জানতে চান? কম্বোডিয়া…… দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোচিনা উপদ্বীপের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত কম্বোডিয়া। ১,৮১,০৩৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ দেশটির উত্তর-পশ্চিমে থাইল্যান্ড, উত্তর-পূর্বে লাওস, পূর্বে ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে থাইল্যান্ডের উপসাগরের সাথে সীমাবদ্ধ । কম্বোডিয়া শব্দটির উৎপত্তি ফরাসি “কম্বোডজ” শব্দ থেকে ।
প্রায় ২০০০ বছর ধরে কম্বোডিয়ায় সভ্যতা গড়ে ওঠে। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৭৯ খেমার রুজ নামে একটি গ্রামীণ কমিউনিস্ট গেরিলা আন্দোলনে ১.৫ মিলিয়ন লোক মারা যায়। খমের রুজের নৃশংস গণহত্যা পর গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে। কম্বোডিয়ার ইতিহাস থেকে জানা যায়, ৮০২-১৪৩১ পর্যন্ত সাম্রাজ্য কেন্দ্র ছিল অ্যাংকোর (আ্যংকোর কম্বোডিয়ার পূবের্ র রাজধানী) পরে এ সম্রাজ্যের পতন হলে আধুনিক কম্বোডিয়ার জন্ম হয়।এছাড়াও ১৯৪১-১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জাপানিরা দখল করে কম্বোডিয়া।১৯৮৯ সালে দেশটি সমাজতন্ত্র পরিত্যাগ করে এবং ১৯৯৩ সালে একটি নতুন সংবিধান পাস করে রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়। ফ্নম পেন কম্বোডিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।সরকারীভাবে খমেন এবং ফরাসি ভাষার প্রচলন থাকলেও ইংরেজীভাষা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পোশাক শিল্পের কারনে কম্বোডিয়ার অর্থনিতীতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। একই সাথে পর্যটন শিল্পেরও ব্যাপক প্রসার ঘটে। এছারাও কম্বোডিয়ায় প্রচুর তেল ও গ্যাস মজুদ রয়েছে বৈদেশিক অর্থনিতীর আশা করছে। এতকিছুর পরেও কম্বোডিয় পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশ , সেখানের বেশিভাগ মানুষই কৃষি কাজ করে।
পর্যটন শিল্পে প্রসারিত কম্বোডিয়ায় দেখার আছে অনেক কিছু।
আংকোর ওয়াট
কম্বোডিয়ায় আংকোর ওয়াট (যার অর্থ “নগর মন্দির”) পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষনীয় পর্যআটন কেন্দ্র । অ্যাংকোর মন্দির পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি নজরকারে। ৬৬৯ ফুট উচু এ মন্দির ১২ শ শতাব্দির দিকে রাজা দ্বিতীয় সুভারম্যান নির্মান করেন । মন্দিরের নকশা এবং নির্মান শৈলী এক অপূরূপ শিল্পের নির্দশণ।
বেয়ন মন্দির
অ্যাঙ্গকোরের বেয়ন মন্দির পৃথিবীর সেরা মন্দির গুলোর মধ্যে একটি। বেয়ন মন্দিরে 200 টিরও বেশি বিশাল পাথরে খচিত মানুষ সদৃশ মুখ কৌতূহলী হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে সমুদ্রের দিকে তাক করা।অনেকে মনে করেন রাজা জয়বর্মণ সপ্তমীর নিজের প্রতিকৃতি ।
বান্তে সেরি মন্দির
বান্তে সেরি মন্দিরটি 967 খ্রিস্টাব্দে নির্মান করা হয় এবং এটি বেশিরভাগভাবে লাল বেলেপাথর দ্বারা নির্মিত। ১৫ মাইল আয়তনের বান্তে স্রেই আংকরের একমাত্র প্রধান মন্দির যা কোনও রাজার জন্য নির্মিত হয়নি, তবে এটি রাজা রাজেন্দ্রবর্মণের অন্যতম পরামর্শক যজ্ঞবহহার দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।
কোহ কের
কোহ কের খুবই অল্পসময়ের জন্য অথ্যাৎ ৯২৮ সাল থেকে ৯৪৪ সাল পর্যন্ত ছিল খেমর সাম্রাজ্যের রাজধানী। । আর এই স্বল্প সময়েই নির্মিত হয়েছিল প্রচুর ভাস্কর্য এবং দর্শনীয় কিছু ভবন । পুরো জয়গাজুড়ে আছে প্রসাত থম একটি মন্দির যার পিরামিডের উচ্চতা ৯৮ফুট। মন্দিরের চুড়ায় পাথরের ব্লকগুলিতে খোদাই করা হয়েছে মানুষ এবং পশুপাখির সদৃশ কিছু নকশা।
সিলভার প্যাগোডা
রয়েল প্যালেস এবং নম পেনের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত সিলভার প্যাগোডা।১৭শ সালে নিমির্ ত এ প্যগোডায় রয়েছে স্বর্ন , রোপ্য এবং মুল্যবান জহরত খচিত বুধ্দ মুতির্ । প্যাগোডার একটি বুদ্ধ মুতির্ তে ব্যবহার করা হয়েছে ৯৫৮৪ টি হীরা। রামায়নের মিথলজি অনুসারে ৪০ জন খেমারশিল্পি ১৯০৩-৪ পর্যন্ত ভিতরে চিত্রাঙ্কন করেন।
প্রেহা বিহার
একাদশ ও দ্বাদশ শতাব্দীতে প্রথম ও দ্বিতীয় সূর্যবর্ধনের রাজত্বকালে কম্বডিয়া ও থাইল্যান্ডের সীমান্তে দ্যাংগ্রিক পর্বতমালার চূড়ায়১,৭২২ ফুট উচু প্রেহা বিহার মন্দিটি নির্মান করা হয়। এটি হিন্দু দেবতা শিবকে উৎসর্গ করা হয়েছিল। প্রিয়া বিহার থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলমান আঞ্চলিক বিরোধের থাকার কারনে ২০০৯ সালে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন সেনা নিহত হয়েছিল।
ফ্যাক্ট
১. আংকোর ওয়াটকে কম্বোডিয়ার আত্না বা হৃদয় বলা হয়। বিশ্বের সবচেয়ে ধর্মীয় জটিলতার শহর হিসেবে চিহ্নিত এ শহরকে ১২ শ শতাব্দিতেই বিশ্বঐতিয্য হিসেবে তালিকাভুক্তি হয়।
২. কম্বোডিয়ায় রয়েছে একটি মর্মস্পর্শী অতীত। খেমার রুজের চার বছরের শাসনআমলে প্রায় 2 মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিল এটি ছিল সেই সময়ে জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ। বর্তমানে কম্বোডিয়ার বেশিভাগ জনসংখ্যা ত্রিশ বছরের কম বয়সী কারন ১৯৭৫–১৯৭৯ সালের গনহত্যা।
৩. কম্বোডিয়ানরা ঝিঝিপোকা, পিঁপড়া এমনকি ট্যারান্টুলাসের মতো ক্রাইপি ক্রল রান্নার জন্য বিখ্যাত তবে বেশিরভাগ লোকেরা তাদের প্রতিদিনের ডায়েটের অংশ হিসাবে মাছ, শাকসবজি এবং ভাত খান।