নেপাল। নে শব্দের অর্থ পবিত্র আর পাল শব্দের অর্থ গুহা। নেপালের নামকরন সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য না থাকায় জনপ্রিয় মত অনুযায়ী নেপাল শব্দের অর্থ পবিত্র গুহা। হিমালয় পর্বতমালা আর পৃথিবীর সবোর্চ্চ চূড়া মাউন্ট এভারেস্ট এর মত অমূল্য সম্পদ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য নিয়ে গড়ে ওঠা দেশ এই নেপাল। হিমালয়ের এই দেশটি সাড়া পৃথিবীর ভ্রমন পিপাসু পর্যটকদের জন্য রোমাঞ্চকর একটি ভ্রমন গন্তব্য।
সাড়া বছরই এই দেশে পর্যটকদের ভীর লেগেই থাকে। যাদের বেশীর ভাগেরই আগমনের মূল আকর্ষন থাকে হিমালক পর্বত আর মাউন্ট এভারেস্ট দেখার আশায়।
নেপাল দক্ষিণ এশীয়ার একটি দেশ যার সাথে উত্তরে চীন এবং দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে ভারতের সীমান্ত রয়েছে। নেপালের জনগোষ্ঠির প্রায় শতকরা ৮১ ভাগ জনগণই হিন্দু ধর্মের অনুসারী। আয়তনে ছোট হলেও পাহাড় পর্বত আর হিমালয়ের কারনে পুরো দেশটাই একটা চমৎকার দর্শনীয় স্থান।
নেপাল এবং চীনের সীমান্ত জুড়ে যে অঞ্চল সেখানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ১০ টি পর্বতের ৮ টিই অবস্থিত। এখানেই রয়েছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট। এভারেস্টের নাম শুনলেই মনের মধ্যে এক রোমাঞ্চকর অনুভুতি বিরাজ করে। মনে মনে ভাবি যদি কখনো এভারেস্ট কে খুব কাছ থেকে দেখতে পেতাম। জানিনা সেই স্বপ্ন কবে সত্যি হবে তবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে হয়তো সেদিন খুববেশী দুরে নয়।
নেপালের রাজধানী কাঠমন্ডু। নেপালের সরকারী বা অফিসিয়াল ভাষা হলো নেপালি। এই দেশটির মোট আয়তন ১৪৭১৮১ বর্গ কিলোমিটার। যা বাংলাদেশের আয়তন থেকে মাত্র ৩৮৯ কিলোমিটার ছোট।
আয়তনে প্রায় বাংলাদেশের সমান হলেও নেপালের জনসংখ্যা মাত্র ২ কোটি ৭১ লক্ষ।
নেপালের ইতিহাস থেকে জানা যায়, নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডুর উপত্যকায় প্রাপ্ত নিওলিথিক যুগের বেশকিছু উপাদান থেকে অনুমান করা হয় যে হিমালয়ান এই অঞ্চলে প্রায় ৯০০০ বছর থেকে মানুষ বসবাস করছে। তবে এটি প্রতিষ্ঠিত যে প্রায় ২৫০০ বছর পূর্ব থেকে নেপালে তিব্বতী-বার্মীয় জনগোষ্ঠীরা বসবাস শুরু হয়েছে।
নেপালের ইতিহাস অনুযায়ী প্রায় ১০০০ খৃস্টপূর্বাব্দের দিকে এই অঞ্চলটিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর জন্য স্বতন্ত্র রাজ্য ও কনফেডারেশন গড়ে উঠে। ৫৬৩-৪৮৩ খৃস্টাপূর্বাব্দ এরকমই একটি কনফেডারেশন এর নাম ছিল সাকিয়া। সাকিয়ার একসময়কার রাজা ছিলেন সিদ্ধার্থ গৌতম। যিনি গৌতম বুদ্ধ বা শুধু বুদ্ধ নামেই পরিচিত। তিনি পবিত্র ও সাধনাময় জীবনযাপনের জন্য তার রাজত্ব ত্যাগ করেছিলেন। ২৫০ খৃস্টপূর্বাব্দে এই অঞ্চলটি উত্তর ভারতের মৌর্য সম্রাজ্যের অধীনে আসে এবং পরবর্তীতে ৪র্থ শতাব্দীতে এটি গুপ্ত সম্রাজ্যের অধীনে একটি পুতুল রাষ্ট্রে পরিণত হয়। একাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে নেপালের দক্ষিণাংশ দক্ষিণ ভারতের চালুক্য সাম্রাজ্যের অধীনে আসে। চালুক্যদের রাজত্বকালে নেপালের ধর্মে ব্যাপক পরিবর্তন আসে কারণ সব রাজাই হিন্দু ধর্মের পৃ্ষ্ঠপোষকতা করতেন এবং তখন থেকেই বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারের বিপরীতে হিন্দু ধর্মের প্রচার শুরু হয়। আর একারনেই নেপাল বর্তমানে হিন্দু ধর্মীয় একটি দেশ।
গোর্খারাজ পৃথ্বীনারায়ণ শাহ নামক এক শাষক কয়েক দশক ধরে যুদ্ধের পর কাঠমান্ডু উপত্যকা দখল করে ছোটবড় রাজ্যে বিভক্ত নেপালকে একটি রাষ্ট্রীয় সংহতি দান করেন। নেপালের ইতিহাসে এই সময় থেকেই আজকের নেপাল একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠে। আর এ কারনে এই পৃথ্বীনারায়ণ শাহকে আজকের নেপালের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।
নেপালের সংস্কৃতি হিন্দু এবং বৌদ্ধ সংস্কৃতির মিশ্রণে হয়েছে। নেপালের সংস্কৃতি বেশ সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ, বিশেষকরে নেওয়ার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি। নেওয়ার জনগোষ্ঠী অনেকগুলো পার্বণ পালন করে এবং তারা তাদের গান ও নাচের জন্য সুপরিচিত।
নেপালীদের প্রধান খাদ্য তালিকায় রয়েছে ডাল-ভাত-তরকারী, এর সাথে থাকে আচার বা চাটনী। বন্যপ্রাণী বৈচিত্র্যা নেপালের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ঠ।
প্রিয় দর্শক ভারতীয় বাংলা মুভি ইয়েতি অভিজান যদি দেখে থাকেন তবে ইয়েতি সম্পর্কে অবশ্যই শুনে থাকবেন। নেপালীরা মনে করে হিমালয়ের গভীরে মানুষের মতই একধরনের প্রানীর অস্তিত্য রয়েছে। অনেক নেপালী পুরোনো শেরপার দাবী তারা ইয়েতি দেখেছেন। নেপালী শেরপা সহ লোকমুখের বর্ননা অনুযায়ী এটা এমন এক প্রানী যা দেখতে মানুষের মত হলেও এর সারা গায়ে সাদা লোম দ্বারা আবৃত। এবং এটি মানুষের চেয়ে লম্বায় বড়। ইয়েতি আছে কি নেই তা বিজ্ঞানদের কাছে আজও রহস্য। তবে এই প্রানীর অস্তিত্যকে একবারে উড়িয়ে দিতে পারছেন না কেউই। কেননা ১৯৫১ সালে পর্বতারোহী এরিক শিপটনেরে তোলা পায়ের ছাপের এক ছবি মাথা ঘুড়িয়ে দিয়েছে সাড়া পৃথিবীকে। তাই বড় কোন অভিজান ছাড়া কেউই ইয়েতির অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারছেন না।
প্রিয দর্শক আগামীতে মাউন্ট এভারেস্ট, ইয়েতি সহ নেপালের দর্শনীয় স্থান নিয়ে আরো অনেক ভিডিও আসবে। সেই ভিডিওগুলো দেখতে চাইলে আমার চ্যানেলটি আজই সাবস্ক্রাইব করূন। সেই সাথে নতুন নতুন ভিডিওর নোটিফিকেশন পেতে পাশে থাকা বেল আইকনটিতে ক্লিক করূন। আজ তাহলে এ পর্যন্তই। আল্লাহ হাফেজ।